পুরুষের ডায়াবেটিস হলে কি সন্তান হয় এবং চিরতরে নিরাময় হবে? তাহলে এই ব্লগটি আপনার জন্য। ডায়াবেটিস এবং পুরুষের উর্বরতার মধ্যে সম্পর্ক একটি জটিল বিষয়। অনেকেই এই নিয়ে প্রশ্ন করেন যে, ডায়াবেটিস থাকলে কি সন্তান হওয়া সম্ভব? এবং কি এই রোগটি চিরতরে নিরাময় হয়? চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
ডায়াবেটিস কি?
ডায়াবেটিস, যাকে বহুমূত্ররোগও বলা হয়, হলো এক ধরনের রোগ যা তখন হয় যখন শরীরের রক্তে খুব বেশি চিনি (গ্লুকোজ) জমা হয়। সাধারণত, আমাদের শরীরের একটি হরমোন, যার নাম ইনসুলিন, রক্তের গ্লুকোজকে নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু ডায়াবেটিস হলে, শরীর হয় তো যথেষ্ট ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না, অথবা তৈরি করা ইনসুলিন সঠিকভাবে কাজ করে না। ফলে রক্তে অতিরিক্ত চিনি জমে।
ডায়াবেটিস দুই ধরনের হয়
- টাইপ ১ ডায়াবেটিস: এই ধরনের ডায়াবেটিসে শরীর একদমই ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না। তাই ইনসুলিন ইনজেকশন দিতে হয়।
- টাইপ ২ ডায়াবেটিস: এই ধরনের ডায়াবেটিসে শরীর ইনসুলিন তৈরি করে, কিন্তু সেটি ঠিকমত কাজ করে না। এটি সাধারণত বড়দের মধ্যে দেখা যায়, তবে অনেক সময় বাচ্চাদেরও হতে পারে।
পুরুষের শুক্রানু কাউন্ট কত?
সাধারণত, একটি ভ্রূণের সৃষ্টি করতে একটি শুক্রাণু ও একটি ডিম্বাণু যথেষ্ট হলেও, পুরুষদের বীর্যরসে পর্যাপ্ত শুক্রাণুর উপস্থিতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণভাবে, প্রতি মিলিলিটার বীর্যরসে শুক্রাণুর সংখ্যা ৪০ থেকে ৩০০ মিলিয়নের মধ্যে থাকে। তবে, শুক্রাণুর সংখ্যা যদি প্রতি মিলিলিটারে ১৬ মিলিয়নের কম হয়, তা হলে প্রজননে অক্ষমতার সম্ভাবনা বাড়ে। যদিও সন্তানলাভ সম্ভব হতে পারে যদি শুক্রাণুর সংখ্যা কমপক্ষে ২০ মিলিয়ন থাকে, তবে এই সংখ্যা আরও বেশি হলে প্রজনন ক্ষমতা বাড়ে।
পুরুষের ডায়াবেটিস হলে কি সন্তান হয়?
ডায়াবেটিস আক্রান্ত পুরুষদের জন্য সন্তান ধারণের সরাসরি কোনো বাধা নেই, তবে দীর্ঘমেয়াদে কিছু শারীরিক ও যৌনগত সমস্যা দেখা দিতে পারে যা সন্তান ধারণের সম্ভাবনা হ্রাস করতে পারে। ডায়াবেটিসের কারণে স্নায়ু এবং রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত হলে যৌন ক্ষমতা হ্রাস পায়, যার ফলে ইরেকটাইল ডিসফাংশন (যৌন উত্তেজনা ধরে রাখতে না পারা) দেখা দিতে পারে। এছাড়া, ডায়াবেটিসের প্রভাব শুক্রাণু উৎপাদন ও বীর্য মুক্তির প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারে, যা প্রজননক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত পুরুষদের মধ্যে প্রায়শই লিবিডো বা যৌন ইচ্ছা কমে যায়। এর কারণ মস্তিষ্কে গ্লুকোজের ঘাটতি, যা ক্লান্তি, দুর্বলতা এবং মানসিক চাপের সৃষ্টি করে। অনেক সময় ডায়াবেটিস পুরুষদের টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমিয়ে দেয়, যা হাইপোগোনাডিজম নামে পরিচিত একটি সমস্যার সৃষ্টি করে। টেস্টোস্টেরনের ঘাটতি শুক্রাণুর গুণমান এবং পরিমাণ কমিয়ে দিতে পারে, যা প্রজনন ক্ষমতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
এছাড়াও, ডায়াবেটিসের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব শরীরের শক্তি ও মানসিক স্থিতি হ্রাস করতে পারে, যা যৌন জীবনে প্রভাব ফেলে এবং সন্তান ধারণের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। সঠিক চিকিৎসা, নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে এই সমস্যাগুলোর প্রভাব অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
স্বামীর ডায়াবেটিস থাকলে কি স্ত্রীর হয়?
স্বামীর ডায়াবেটিস থাকলে স্ত্রীর জন্য সরাসরি কোনো ঝুঁকি নেই, কারণ ডায়াবেটিস একটি সংক্রামক রোগ নয়। তবে, ডায়াবেটিস থাকলে জীবনযাপনের কিছু পরিবর্তন এবং মানসিক চাপ দেখা দিতে পারে, যা দাম্পত্য জীবনে প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন, ডায়াবেটিসের কারণে স্বামীর শারীরিক সুস্থতা, যৌন সক্ষমতা এবং মানসিক অবস্থায় পরিবর্তন আসতে পারে, যা সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। এই পরিস্থিতিতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালো যোগাযোগ এবং সমর্থন থাকা জরুরি। অনেকেই জানতে চান, ডায়াবেটিস হলে সহবাস করা যায় কিনা? এটি সম্ভব, তবে রক্তচাপ ও রক্তের শর্করার নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ডায়াবেটিস চিরতরে নিরাময় হবে
ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘস্থায়ী অসুখ যেখানে শরীর রক্তের শর্করা (গ্লুকোজ) নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। যদিও ডায়াবেটিস পুরোপুরি সারানোর কোনো ওষুধ নেই, নিয়মিত কিছু প্রাকৃতিক উপায়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। নিচে এমন কিছু সহজ এবং কার্যকর পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
পেঁয়াজ
পেঁয়াজ রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণের জন্য সবচেয়ে সস্তা এবং কার্যকর উপায়। গবেষণায় দেখা গেছে, পেঁয়াজের নির্যাস রক্তে শর্করার পরিমাণ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে পারে। পেঁয়াজ এবং ডায়াবেটিসের ওষুধ মেটফরমিন একসাথে কাজ করে রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
নয়নতারা ফুল
নয়নতারা ফুল ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে অনেক উপকারী। ফুল এবং গাছের শিকড় এক কাপ পানিতে সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকালে পানিটা ছেঁকে অর্ধেক করে দিনে দু’বার পান করলে ডায়াবেটিসের উপসর্গ কমে।
পনির ফুল
পনির ফুল শরীরে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়ক। রাতে ১০-১২টি পনির ফুল পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে এই পানি পান করলে রক্তে ইনসুলিনের ভারসাম্য বজায় থাকে। এটি একটি প্রাকৃতিক উপায়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের একটি ভালো পদ্ধতি।
করলা
করলার রস রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে সহায়ক। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে করলার রস পান করলে ইনসুলিন নিঃসরণের মাত্রা বাড়ে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসে।
দারচিনি
দারচিনি অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন উৎপাদনকে উদ্দীপ্ত করে এবং রক্তের সুগার কমাতে সাহায্য করে। দারচিনির গুঁড়া চা, পানি বা অন্য পানীয়ের সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন খাওয়া উপকারী।
অ্যালোভেরা
অ্যালোভেরা জেলে ফাইটোস্ট্যারলস নামক উপাদান থাকে যা রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। অ্যালোভেরা জেল, হলুদ এবং তেজপাতার মিশ্রণ পান করলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
আম পাতা
৩-৪ টি আম পাতা জলে ফুটিয়ে প্রতিদিন সকালে খেলে ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা কমে। এছাড়াও শুকনো আম পাতার গুঁড়ো দিনে দু’বার আধা চামচ করে খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা কম থাকে।
মেথি
মেথি বীজ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে খুব কার্যকর। মেথি বীজ রাতে পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে এই পানি পান করলে ইনসুলিন নিঃসরণ বাড়ে এবং রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
চর্বিযুক্ত মাছ
স্যালমন, সার্ডিন, হেরিং জাতীয় চর্বিযুক্ত মাছ ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। এ ধরনের মাছের মধ্যে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে যা ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে ও সাহায্য করে।
ডুমুর
ডুমুরের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ডুমুরের পাতা ইনসুলিন প্রতিরোধের উন্নতি ঘটায়।
গায়নূরা প্রোকাম্বেন্স গাছ
গায়নূরা প্রোকাম্বেন্স গাছ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ২টি পাতা খেলে ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ কমে। ইনসুলিন ব্যবহারকারীরা সকালে ও রাতে ২টি পাতা খেলে উপকার পাবেন।
শরীরচর্চা
শরীরচর্চা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। ব্যায়াম করলে শরীরের ইনসুলিন ব্যবহার ক্ষমতা বাড়ে এবং ইনসুলিন কম প্রয়োজন হয়। হাঁটাহাঁটি, সাইক্লিং, বা হালকা ব্যায়াম করলে রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
ডায়াবেটিস এবং যৌন অক্ষমতার চিকিৎসা
“ইয়েস মেন” পুরুষদের স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন! আমরা সাশ্রয়ী মূল্যে সেরা ফিজিওথেরাপি সেবা প্রদান করছি। আমাদের অভিজ্ঞ থেরাপিস্টরা পেলভিক স্টিমুলেশন, শক ওয়েভ থেরাপি, আকুপাংচার এবং PEMF এর মাধ্যমে চিকিৎসা করে থাকেন। আপনার সুস্থতার জন্য আমরা সবসময় প্রস্তুত!
আজই আপনার অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিন
➤ বনানী শাখা: ০১৭৫৩৬৩১৮৪৬
➤ উত্তরা শাখা: ০১৩০৫৩০১২৪৭
ডায়াবিটে (Dia Beat) আমরা সমন্বিত চিকিৎসার মাধ্যমে ডায়াবেটিস রোগীদের বিভিন্ন জটিলতা নিরাময়ে কাজ করে থাকি। জটিলতাসমূহের মধ্যে নার্ভের ব্যাথা ও দূর্বল হয়ে যাওয়া, কিডনিজনিত সমস্যা, ডায়াবেটিক ফুট আলসার বা ঘা জনিত সমস্যা, ব্লাড সারকুলেশন বা রক্ত সঞ্চালন জনিত সমস্যা ও অন্যান্য। সমন্বিত চিকিৎসা ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে ওজন থেরাপি যা ওজন গ্যাসের মাধ্যমে দেয়া হয়। আকুপাংচার, ডায়াবেটো ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক এনার্জি, পালস ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড থেরাপি ও থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ প্রোগ্রাম এর মাধ্যমে চিকিৎসা দিয়ে থাকি।
অ্যাপয়েন্টমেন্ট যোগাযোগ করুণ
➤ বনানী শাখা: ০১৯৮৮৮৯৯৯৩৬
➤ উত্তরা শাখা: ০১৯৮৮৮৯৯৯৩৬
তথ্যসূত্র
CDC — Diabetes and Men
Healthline — 11 Ways to Prevent Type 2 Diabetes
Gundersen Health — 6 natural ways to prevent diabetes before it starts
সাধারণ জিজ্ঞাসা
ডায়াবেটিস রোগীর বাবা কি সুস্থ সন্তান জন্ম দিতে পারে?
যদি বাবার টাইপ 1 ডায়াবেটিস থাকে, তবে সন্তানের ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি ১৭ জনে ১। যদি মায়ের টাইপ 1 ডায়াবেটিস থাকে এবং শিশুটি ২৫ বছর বয়সের আগে জন্মগ্রহণ করে, তাহলে ঝুঁকি ২৫ জনে ১। তবে শিশুটি যদি ২৫ বছর বয়সের পরে জন্মগ্রহণ করে, তাহলে ঝুঁকি ১০০ জনে ১।
ডায়াবেটিস কি বীর্যের উপর প্রভাব ফেলে?
এটি মৌলিক কোষগুলোকে সক্রিয় রাখার পাশাপাশি মানুষের শুক্রাণুর গতিশীলতা এবং হাইপারঅ্যাক্টিভেশন বাড়ানোর জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। ডায়াবেটিস রোগ শুক্রাণুর গুণমান, ডিএনএ অখণ্ডতা, গতিশীলতা এবং সেমিনাল প্লাজমার উপাদানগুলিকে (সেমিনাল ট্র্যাক্টের অঙ্গ বা টিউবুলের নিঃসরণ থেকে উৎপন্ন তরল) নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।
ডায়াবেটিস রোগীর বন্ধ্যাত্ব কেন হয়?
ডায়াবেটিস মহিলাদের মেনার্কে (প্রথমবার ঋতুস্রাব শুরু হওয়া) বিলম্বিত করে এবং বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে। এটি উচ্চ রক্তে শর্করার কারণে দ্রুত এবং অকাল ডিম্বাশয়ের বার্ধক্য ঘটার ফলে প্রাথমিক মেনোপজের মাধ্যমে তীব্র হয়। এর ফলে ডায়াবেটিস একজন মহিলার প্রজনন জীবনকালকে ছোট করে দেয়।
বীর্যে কি সুগার বেশি থাকে?
স্বাভাবিক মানুষের বীর্যে গ্লুকোজের পরিমাণ 0.41 +/- 0.09 mmol/l। শুক্রাণুর গতিশীলতার সাথে গ্লুকোজের নেতিবাচক সম্পর্ক থাকায়, এর বিপাকের উপর এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সার্ভিকাল শ্লেষ্মা গ্লুকোজ সমৃদ্ধ এবং এতে ফ্রুক্টোজ থাকে না।
কোন কোন ফলে সুগার বেশি থাকে?
সর্বাধিক চিনিযুক্ত ফলের মধ্যে রয়েছে কলা, আপেল, আঙ্গুর, চেরি এবং ডুমুর।
চিনি খেলে শরীরে কি হয়?
যখন আপনি চিনি বা কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করেন, তখন অগ্ন্যাশয় গ্লুকোজকে শক্তি হিসেবে কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে শরীরকে সাহায্য করার জন্য ইনসুলিন নিঃসরণ করে।