শরীরে স্ফূর্তি আনতেই হোক বা যৌনজীবন সুখী রাখতে, পুরুষের টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির উপায় জানা অত্যন্ত জরুরি। এই হরমোন পেশির সুগঠনের কাজেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু জীবনযাত্রায় অনিয়ম, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, অতিরিক্ত মদ্যপানসহ নানা কারণে অনেকের শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের ক্ষরণ কমে যায়। এ ধরনের পরিস্থিতিতে অনেকেই হরমোনের ইনজেকশন বা ওষুধের সাহায্য নেন। তবে স্বাভাবিক উপায়েও এই হরমোনের ক্ষরণ বাড়ানো সম্ভব।
টেস্টোস্টেরন বাড়ানোর জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, ডিম, মাছ, বাদাম, মধু, এবং সবুজ শাকসবজি টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম, বিশেষ করে ওজন উত্তোলনের মাধ্যমে শরীরে টেস্টোস্টেরন বাড়ানো যায়। এছাড়াও পর্যাপ্ত ঘুম এবং মানসিক চাপ কমানোর জন্য ধ্যান বা যোগব্যায়াম করা উচিত। ধূমপান এবং অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান থেকে বিরত থাকাও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলি টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করে।
সেক্সে মধুর উপকারিতা কি? সহবাসে মধুর ব্যবহার তা জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ুন।
টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির খাবার তালিকা
এই হরমোনের ঘাটতি হলে পুরুষের শরীরে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর ফলে ক্লান্তি, শক্তির অভাব, এবং যৌন স্বাস্থ্যজনিত সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। হরমোনের ভারসাম্য রক্ষার জন্য যেসব খাবার খাওয়া উচিত চলুন দেখে নেই –
উদ্ভিজ্জ দুধ
সয়া, আমন্ড এবং ওটসের দুধ শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের ক্ষরণ বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। ল্যাকটোজ়ে অ্যালার্জি থাকলে, উদ্ভিজ্জ দুধ একটি চমৎকার বিকল্প। এটি প্রোটিন ও পুষ্টি সরবরাহ করে, যা সাধারণ দুধে প্রায়ই পাওয়া যায় না।
বেদানা
অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টে সমৃদ্ধ বেদানা প্রদাহ এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। মানসিক চাপ শরীরে হরমোনের মাত্রা ওঠানামার অন্যতম বড় কারণ। নিয়মিত বেদানা খেলে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে, যার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে টেস্টোস্টেরনের মাত্রার উপরেও। এছাড়াও, বেদানার রস হৃৎযন্ত্রের সুস্থতায়ও অবদান রাখে।
ওমেগা ৩ যুক্ত মাছ
রুই, কাতলা, বোয়াল, এবং চিতল জাতীয় তেলযুক্ত মাছ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে ভরপুর থাকে। হৃৎযন্ত্রের ক্রিয়া ভাল রাখার পাশাপাশি, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরে টেস্টোস্টেরনের ক্ষরণ বৃদ্ধি করতেও সাহায্য করে। নিয়মিত তেলযুক্ত মাছ খেলে হার্টের সুস্থতা বজায় থাকে এবং শরীরের সার্বিক পুষ্টির জন্যও এটি উপকারী।
ডিম
অ্যামাইনো অ্যাসিড ও ভিটামিন ডি তে ভরপুর ডিম শরীরে টেস্টোস্টেরনের ক্ষরণ বৃদ্ধি করে। ডিম প্রোটিনের একটি ভাল উৎস এবং রোজ ডায়েটে ডিম রাখা ভীষণ জরুরি। ডিম খেলে শরীরের পেশি গঠনে সহায়তা হয় এবং শক্তি বৃদ্ধিতেও এটি কার্যকর।
কলা
টেস্টোস্টেরনের ক্ষরণ বৃদ্ধি করতে রোজের ডায়েটে কলা রাখতে পারেন। নিয়ম করে কলা খেলে শরীর চাঙ্গা থাকে, স্ফূর্তি আসে এবং মানসিক চাপ কমে যায়। এছাড়া, কলা পটাশিয়ামে ভরপুর, যা শরীরের জলবাহিত ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালান্স বজায় রাখতে সাহায্য করে।
আরও জানুন:পুরুষদের জন্য আদার উপকারিতা জেনে নিন !!
তুলসী পাতা
তুলসী পাতা শরীরের টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। এতে থাকা বিভিন্ন উপাদান মানসিক চাপ কমাতে এবং শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। সকালে এক কাপ তুলসী পাতার চা পান করা যেতে পারে।
মধু
মধুতে রয়েছে প্রাকৃতিক নিরাময়কারী উপাদান বোরোন, যা শরীরে টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ বাড়াতে এবং নাইট্রিক অক্সাইডের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে। এটি ধমনী সম্প্রসারণের মাধ্যমে লিঙ্গ উত্থান জনিত সমস্যাতে সাহায্য করে। এইভাবে মধু প্রাকৃতিকভাবে আপনার যৌন স্বাস্থ্যকে উন্নত করে এবং আপনার যৌন জীবনে সুখ ও পরিতৃপ্তি আনতে সাহায্য করে।
বাঁধাকপি
এই সবজিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ উপাদান রয়েছে। এর ইনডোল থ্রি-কার্বিনল উপাদানটি স্ত্রী হরমোন ইস্ট্রোজেনের পরিমাণ কমিয়ে টেস্টোস্টেরনকে আরও কার্যকর করে তোলে। নিয়মিত বাঁধাকপি খাওয়ার ফলে আপনি স্বাস্থ্যের উন্নতি অনুভব করতে পারেন এবং এটি আপনার হরমোন ব্যালান্স ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
রসুন
রসুনের আলিসিন যৌগ মানসিক চাপের হরমোন করটিসলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, ফলে টেস্টোস্টেরন ভালোমতো কাজ করে। ভালো ফল পেতে রসুন কাঁচা খাওয়ার অভ্যাস করুন।
কাঠবাদাম
নারী এবং পুরুষ উভয়ের ‘সেক্স ড্রাইভ’ বৃদ্ধির জন্য প্রতিদিন এক মুঠ কাঠবাদাম যথেষ্ট। এই বাদামে রয়েছে জিঙ্ক যা টেস্টোস্টেরন হরমোন বাড়িয়ে কামবাসনা বৃদ্ধি করে।
ঝিনুক
টেস্টোস্টেরন তৈরিতে জিঙ্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ঝিনুকে প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক থাকে, যা টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। যদি ঝিনুক না পছন্দ হয়, তবে সুইস বা রিকোত্তা চিজ খেতে পারেন।
টক ফল
টকজাতীয় ফলে রয়েছে ভিটামিন এ, যা টেস্টোস্টেরন উৎপন্ন করতে প্রয়োজন। এটি ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমিয়ে পুরুষ হরমনকে ভালোমতো কাজ করতে সাহায্য করে।
পালংশাক
এটি প্রমাণিত যে পালংশাক ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমাতে সক্ষম। এতে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন সি এবং ই রয়েছে যা টেস্টোস্টেরন তৈরিতে সাহায্য করে।
আঙুর
হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন একথোক লাল আঙুর খেলে টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, শুক্রাণুর তৎপরতা উন্নত হয় এবং শক্তিশালী করে।
ডালিম
ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ইম্পোটেন্স রিসার্চের তথ্য অনুযায়ী, যৌন কর্মে অক্ষম পুরুষদের মধ্যে ৪৭ শতাংশ যারা প্রতিদিন ডালিমের রস পান করেন তাদের অবস্থার উন্নতি হয়েছে।
মাংস
যারা একেবারেই মাংস খান না তাদের শরীরে টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ কম থাকতে পারে। তবে অতিরিক্ত মাংস খাওয়ার আগে সাবধান হওয়া উচিত। যুক্তরাষ্ট্রের ইউটাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানান, গরু ও ভেড়ার মাংসে প্রচুর স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে যা বেশি খেলে স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে।
তথ্যসূত্র
WebMD – Natural Ways to Boost Testosterone
Healthline – 8 Proven Ways to Increase Testosterone Levels Naturally
Medical News Today – How do you boost testosterone naturally?
Houston Methodis – 5 All-Natural Ways to Boost Your Testosterone
Health – 7 Ways to Increase Testosterone
Forbes – How To Increase Testosterone: What To Know
সাধারণ জিজ্ঞাসা
টেস্টোস্টেরন হরমোন বেড়ে গেলে কি হয়?
টেস্টোস্টেরন হরমোন বেড়ে গেলে পেশি বৃদ্ধি, শক্তি বৃদ্ধি এবং যৌন স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।
টেস্টোস্টেরন হরমোন এর স্বাভাবিক মাত্রা কত?
পুরুষদের জন্য টেস্টোস্টেরন হরমোনের স্বাভাবিক মাত্রা প্রতি ডেসিলিটারে ৩০০ থেকে ১,০০০ ন্যানোগ্রাম।
পুরুষের হরমোন কমে গেলে কি হয়?
পুরুষের হরমোন কমে গেলে শরীরের শক্তি হ্রাস, যৌন আকাঙ্ক্ষা কমতে পারে এবং শিশুতে প্রতিক্রিয়ার সমস্যা হতে পারে।
দুধ খেলে কি পুরুষের টেস্টোস্টেরন বাড়ে?
পুরুষের টেস্টোস্টেরন বাড়াতে দুধ খাওয়ার কোনো বিশেষ প্রমাণ নেই।
টেস্টোস্টেরন হরমোন বেশি হলে কি হার্টের সমস্যা হয়?
টেস্টোস্টেরন হরমোন বেশি থাকলে হার্টের সমস্যা হতে পারে, যেমন হার্ট অ্যাটাক এবং হার্ট রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি।
টেস্টোস্টেরন হরমোন বেশি হলে কি স্ট্রোক হয়?
টেস্টোস্টেরন হরমোন বেশি থাকলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
টেস্টোস্টেরন হরমোন বেশি হলে কি উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে?
টেস্টোস্টেরন হরমোন বেশি থাকলে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে।