Yes Men

আমাদের টিম

টাইফয়েড জ্বর হলে কি কি খাওয়া উচিত? এবং টাইফয়েড কেন হয়?

টাইফয়েড জ্বর হলে কি কি খাওয়া উচিত? এবং টাইফয়েড কেন হয়?

আপনি কি টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন? এই রোগে আক্রান্ত হলে খাবারের ব্যাপারে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। কী কী খাবেন, কী কী খাবেন না, এই সব নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে। আবার, টাইফয়েড আসলে কেন হয়, এর লক্ষণ কী কী, এসব বিষয়েও অনেকেই সঠিক ধারণা রাখেন না।  তাই আজকের ব্লগ, এ আমরা জানবো টাইফয়েড জ্বর হলে কি কি খাওয়া উচিত? এবং টাইফয়েড কেন হয়? এই রোগের চিকিৎসা কি? এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

টাইফয়েড কী?

ডাঃ সাইফুল ইসলাম, পিটি বলেন, টাইফয়েড এক ধরনের জ্বর যা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে। এটি প্রধানত দুটি ব্যাকটেরিয়া, সালমোনেলা টাইফি এবং সালমোনেলা প্যারাটাইফি, দ্বারা সংক্রমিত হয়। এই দুই ধরনের জীবাণুর সংক্রমণের লক্ষণ প্রায় একই রকমের, যার মধ্যে তীব্র জ্বর, মাথাব্যথা, পেটব্যথা, দুর্বলতা এবং ক্ষুধামন্দা অন্তর্ভুক্ত। টাইফয়েডের সংক্রমণ সাধারণত দূষিত পানি ও খাদ্যের মাধ্যমে ছড়ায়। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করলে এটি মারাত্মক হতে পারে।

টাইফয়েড জ্বর হলে কি কি খাওয়া উচিত? এবং টাইফয়েড কেন হয়?

টাইফয়েড কেন হয়?

টাইফয়েড জ্বরের কারণ হল সালমোনেলা টাইফি নামক এক প্রকার ব্যাক্টেরিয়া, যা অন্ত্র ও রক্তে বৃদ্ধি পায়। এই ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমিত ব্যক্তির মল ও মূত্র দ্বারা দূষিত খাদ্য বা জল পানের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। টাইফয়েড ছড়ানোর জন্য প্রধান কারণগুলির মধ্যে রয়েছে অস্বাস্থ্যকর স্যানিটেশন ব্যবস্থা এবং ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধির অভাব। টাইফয়েডে আক্রান্ত হলে উচ্চ জ্বর, দুর্বলতা, পেটব্যথা, মাথাব্যথা এবং বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।

টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ কি?

টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ গুলো কি কি চলুন দেখে নেই

  • টাইফয়েড জ্বরে প্রচণ্ড মাথাব্যথা হতে পারে, যা সাধারণত দিনের বেলায় বেশি অনুভূত হয়।
  • গলায় ব্যথা এবং অস্বস্তি হতে পারে, যা খাবার গিলতে কষ্টর হয়।
  • পেটের নিচের অংশে বা পুরো পেটে ব্যথা হতে পারে, যা খাদ্য গ্রহণের পর বাড়তে পারে।
  • টাইফয়েডে আক্রান্ত হলে শরীর দুর্বল হয়ে যায় এবং সাধারণ কাজ করতেও কষ্ট হয়।
  • টাইফয়েডে জ্বরের তাপমাত্রা সাধারণত ১০৩-১০৪ ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠতে পারে এবং এটি সাধারণত বেশ কয়েকদিন স্থায়ী হয়।
  • টাইফয়েডের কারণে ডায়রিয়া হতে পারে, যা শরীর থেকে প্রচুর পানি ও লবণ বের করে দেয়।
  • অনেক সময় টাইফয়েডে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা যায়, যা মলত্যাগে কষ্ট হয়।
  • কিছুক্ষেত্রে রোগীর শরীরে, বিশেষ করে পেটে ও বুকে, লালচে দানা দেখা যেতে পারে। এটি সাধারণত সংক্রমণের দ্বিতীয় সপ্তাহে দেখা দেয়।

টাইফয়েড জ্বর হলে কি কি খাওয়া উচিত? এবং টাইফয়েড কেন হয়?

টাইফয়েড জ্বর হলে কি কি খাওয়া উচিত?

টাইফয়েড জ্বর হলে নির্দিষ্ট কিছু খাবার গ্রহণ করা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। নিচে টাইফয়েড ডায়েটের জন্য সুপারিশকৃত কিছু খাবারের তালিকা দেওয়া হলো –

  • প্রোটিন: টার্কি, মাছ, ডিম, মুরগি, টফু, স্থল মাংস।
  • রান্না করা সবজি: সেদ্ধ আলু, গাজর, সবুজ মটরশুটি, বিট, স্কোয়াশ।
  • ফল: তরমুজ, আঙ্গুর, পাকা কলা, আপেল।
  • শস্য: দই, সাদা চাল, পাস্তা, সাদা রুটি।
  • পানীয়: নারকেলের পানি, চুনের রস, রুহাফজা, বোতলজাত পানি, ভেষজ চা, জুস।
  • দুগ্ধজাত পণ্য: দই, কম চর্বি বা চর্বিহীন দুধ, বাটারমিল্ক, পনির এবং আইসক্রিম।

টাইফয়েড জ্বর হলে সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিছু খাবার রয়েছে যা টাইফয়েড রোগীদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী হতে পারে।

দই

দই একটি অন্যতম সেরা প্রোবায়োটিক খাবার, যা টাইফয়েড রোগীদের অন্ত্রের সমস্যা যেমন ফোলাভাব এবং লুজ মোশন থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে। প্রোবায়োটিক ভাল ব্যাকটেরিয়া সরবরাহ করে যা স্বাস্থ্য উন্নত করতে এবং বিভিন্ন অসুস্থতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় দুধ বা দই অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।

তরমুজ এবং আঙ্গুর

তরমুজ এবং আঙ্গুরের মতো জলের পরিমাণ বেশি এমন ফল সহজে হজম হয় এবং টাইফয়েড রোগীদের শরীরের পানির অভাব পূরণ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও, এই ফলগুলোতে প্রচুর ভিটামিন সি, এ এবং বি৬ রয়েছে, যা টাইফয়েড জ্বরের তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

সেদ্ধ আলু

সেদ্ধ আলু কার্বোহাইড্রেটের ভালো উৎস এবং টাইফয়েড রোগীর জন্য উচ্চ ক্যালোরিফিক মান সরবরাহ করে। আলু সিদ্ধ করলে এতে থাকা জীবাণু এবং ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হয়। আলু আয়রন, পটাসিয়াম এবং ভিটামিন সি এর ভালো উৎস।

পোরিজ এবং ডালিয়া

পোরিজ এবং ডালিয়া টাইফয়েড রোগীর জন্য ভালো খাবার। এরা কার্বোহাইড্রেট এবং প্রোটিনে সমৃদ্ধ, যা সহজে হজম হয় এবং টাইফয়েডের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে।

প্রচুর পরিমাণে তরল

প্রচুর পরিমাণে তরল, যেমন নারকেল জল, চুনের রস, রুহাফজা এবং বাটারমিল, টাইফয়েড রোগীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তরল শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে।

কলা

কলা একটি উচ্চ-ক্যালোরি খাবার এবং টাইফয়েড রোগীদের ওজন পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে। এতে পটাসিয়াম, ভিটামিন সি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান রয়েছে।

সাদা চাল

সাদা চাল কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ এবং সহজে হজম হয়। এটি শরীরকে প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করে।

বোতলজাত জল

বোতলজাত জল বিশুদ্ধ এবং ব্যাকটেরিয়া মুক্ত হওয়ায় এটি টাইফয়েড রোগীদের জন্য নিরাপদ।

ভেষজ চা

ভেষজ চা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ডিটক্সিফিকেশনে সহায়ক। এতে ক্যাফেইন না থাকায় এটি টাইফয়েড রোগীদের জন্য ভালো।

নারকেলর পানি

নারকেলর পানি স্বাস্থ্যকর খনিজ সমৃদ্ধ এবং টাইফয়েডের সময় শরীরের পুষ্টি পূরণ করতে সাহায্য করে।

টাইফয়েড জ্বর হলে কি কি খাওয়া উচিত না?

টাইফয়েড জ্বর হলে এবং টাইফয়েড সেরে গেলেও কিছু দিন খাবারে বিধিনিষেধ মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হজম ক্ষমতা স্বাভাবিক হতে কিছুটা সময় লাগে, তাই খাবারের ব্যাপারে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। নিম্নলিখিত খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত –

  • হাই ফাইবার ফুড খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে। স্যালাড জাতীয় খাবার কিছু দিন না খাওয়াই মঙ্গল।
  • কাঁচা পেঁয়াজ, বাঁধাকপি, ব্রকোলি খাওয়া যাবে না।
  • ব্রাউন রাইস, কিনোয়া, বাজরা, ওটস না খাওয়াই ভাল।
  • মুসুর ডাল, রাজমা, ব্ল্যাক বিনস, ঘুগনি খাওয়া খাবেন না।
  • বিশেষ করে ডিপ ফ্রাই খাবার একেবারে মানা। পট্যাটো চিপস, ডোনাট, তেলেভাজা, সিঙ্গাড়া বাদ।
  • ফ্ল্যাক্সের বীজ, চিয়ার বীজ, কুমড়োর বীজ বন্ধ।
  • শুকনা মরিচ বা মরিচ দিয়ে রান্না করা খাবার খেলে হজমের সমস্যা করতে পারে। অল্প কাঁচা মরিচ ও সামান্য গোলমরিচ চলতে পারে।

টাইফয়েড জ্বর হলে কি কি খাওয়া উচিত? এবং টাইফয়েড কেন হয়?

টাইফয়েড জ্বর হলে কি গোসল করা যায়?

টাইফয়েড হলে গোসল করা যাবে, তবে তা আবশ্যকীয় নয়। জ্বর কমানোর জন্য ঘাড় এবং কপালের পেছনের অংশে পানিপট্টি দেওয়া যেতে পারে, যা জ্বর কমাতে সাহায্য করে। কুসুম গরম পানিতে ভেজানো কাপড় দিয়ে শরীর মুছে ফেলা হলে আরাম পাওয়া যায় এবং জ্বর কমতে সাহায্য করে। তবে এ সময় চিকিৎসকের অনুমতি ছাড়া ঠান্ডা পানিতে গোসল করা উচিৎ নয়। এছাড়া, টাইফয়েড আক্রান্ত অবস্থায় যথেষ্ট বিশ্রাম নেওয়া জরুরি। পরিমাণমতো পানি পান করে শরীরের পানিশূন্যতা দূর করা, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা সুস্থতার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু টাইফয়েড একটি সংক্রামক ব্যাধি, তাই রোগীকে আলাদা রাখা এবং তার ব্যবহৃত জিনিসপত্র পরিষ্কার রাখা উচিত। এই সময় আপনার পরিবারের এবং প্রিয়জনের সমর্থনও গুরুত্বপূর্ণ। তাদের সান্নিধ্য এবং যত্ন আপনার সুস্থতার প্রক্রিয়াকে দ্রুততর করতে পারে। মনে রাখতে হবে, টাইফয়েড একটি গুরুতর রোগ হলেও সঠিক পরিচর্যা ও চিকিৎসায় দ্রুত সুস্থ হওয়া সম্ভব।

আমাদের কাছ থেকে কেন সেবা নিবেন?

ডাঃ সাইফুল ইসলাম, পিটি বলেন, টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে প্রচুর পরিমাণ পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে। জ্বরের কারণে শরীরে পানি কমে যায়, অনেকের ডায়রিয়া হয়ে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। তাই শরবত, স্যালাইন, ফলের রস, দুধ, ডিম ইত্যাদি পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো উচিত এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিশ্চিত করা উচিত। ইয়েস মেনে কম খরচে টাইফয়েড জ্বর সহ মল ধরে রাখতে না পারা,কোষ্ঠকাঠিন্য, আই বি এস এবং বার বার পায়খানার বেগের চিকিৎসা ওজোন থেরাপির মাধ্যমে দেওয়া হয়ে থাকে। বাংলাদেশে দক্ষ ওজোন থেরাপি ফিজিওথেরাপিস্ট খুবই কম। এর মধ্যে ডাঃ সাইফুল ইসলাম পিটি স্যার অন্যতম। অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে আজই যোগাযোগ করুন। বনানী  শাখায় অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে কল করুন- +8801753631846. এবং উত্তরা শাখায় অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে কল করুন- +8801305301247. 

তথ্য সূত্র

BLK-MAX – Diet For Typhoid: Foods To Eat And Avoid for Fast Recover

Healthline – Typhoid Diet: Overview, Foods, and Benefits

Bansal Hospital – Diet For Typhoid Fever: Foods To Eat And Avoid For Fast Recovery

Pharm Easy – Foods for Typhoid – What to Eat and What to Avoid?

Metropolis – Typhoid Diet : Get Typhoid Diet Chart, Know The Foods to Eat & Avoid for Fast Recovery

সাধারণ জিজ্ঞাসা

না, টাইফয়েড সরাসরি ছোঁয়াচে নয়, তবে দূষিত খাদ্য বা পানির মাধ্যমে ছড়াতে পারে, তাই পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা খুবই জরুরি।

টাইফয়েড জ্বর সাধারণত দুই থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয়, তবে ঠিকমতো চিকিৎসা নিলে দ্রুত সুস্থ হওয়া সম্ভব।

টাইফয়েড জ্বর হলে শারীরিক দুর্বলতা, পেটের সমস্যা, ও প্রায়ই তীব্র মাথাব্যথা হতে পারে, তাই সঠিক চিকিৎসা নিয়ে বিশ্রাম নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top