Yes Men

আনারস ও দুধ একসাথে খেলে কি হয়

আনারস ও দুধ একসাথে খেলে কি হয় জেনে নিন!!

আমাদের ছোটবেলায় অনেক কথাই শোনা যায়, যা শুনে আমরা ভয় পেয়ে যাই। এমনই একটি জনপ্রিয় কথা হলো — আনারস খাওয়ার পর দুধ পান করলে মৃত্যু হতে পারে। এই কথা এতটাই প্রচলিত যে অনেকেই আনারস খাওয়ার পর দুধ পান করতে ভয় পান। কিন্তু এই কথার পিছনে কোনো সত্যতা আছে কি? চলুন জেনে নেওয়া যাক, আনারস ও দুধ একসাথে খেলে কি হয়?

আনারস ও দুধ একসাথে খেলে কি হয়

আনারস ও এর গুণাগুণ

ডাঃ সাইফুল ইসলাম পিটি বলছেন, আনারস একটি খুবই কম ক্যালরির ফল। ১০০ গ্রাম আনারসে সাধারণত ৪০ থেকে ৫০ ক্যালরি থাকে। এতে ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, রিবোফ্লাভিন, থায়ামিন, ফোলেট, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং ম্যাঙ্গানিজের মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এছাড়াও আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার, যা আমাদের হজম প্রক্রিয়া ভালো রাখতে সাহায্য করে এবং দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে।

আনারসের অনেক উপকারিতা রয়েছে। যেমন: কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে এটি খুব কার্যকর, কারণ এর ডায়েটারি ফাইবার আমাদের পরিপাকতন্ত্রকে শক্তিশালী করে তোলে। তাছাড়া আনারসে রয়েছে ব্রোমেলিন নামক একটি এনজাইম, যা প্রোটিন হজম করতে সাহায্য করে এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। তাই, হজমের সমস্যা এবং আর্থ্রাইটিসের ব্যথা কমাতে এটি বেশ উপকারী।

আনারস ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে, কারণ এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরে ফ্রি র‍্যাডিকেলকে কমায়। এর ফলে কোষের ক্ষতি প্রতিরোধ হয় এবং ক্যানসারের ঝুঁকি কমে। বিশেষ করে স্তন ক্যানসার ও কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে আনারস বেশ কার্যকর।

জ্বর বা জন্ডিসে আক্রান্ত রোগীদের জন্যও আনারস বেশ উপকারী। এই ধরনের অসুস্থতায় লিভার দুর্বল হয়ে গেলে খাবারের রুচি কমে যায়। আনারসের মিষ্টি এবং টক স্বাদ মুখের রুচি বাড়ায় এবং লিভারের কার্যক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করে।

আনারস দীর্ঘদিন ধরে কৃমিনাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এবং এখনও এর কার্যকারিতা রয়েছে। এটি পেটের কৃমি দূর করতে সাহায্য করে এবং শরীরকে কৃমি মুক্ত রাখতে পারে। আর্থ্রাইটিসের ব্যথা এবং প্রদাহ কমাতে আনারস অত্যন্ত কার্যকরী, কারণ এর ব্রোমেলিন প্রদাহ কমানোর জন্য পরিচিত।

এর পাশাপাশি আনারস ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে তোলে, কারণ এতে রয়েছে উচ্চমাত্রার ভিটামিন সি, যা ঠান্ডা, কাশি এবং অন্যান্য সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

আনারস ও দুধ একসাথে খেলে কি হয়

দুধ ও এর গুণাগুণ

ডাঃ সাইফুল ইসলাম পিটি বলেন, দুধ হলো এক ধরনের আর্দশ খাবার, যা আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় অনেক পুষ্টি সরবরাহ করে। এতে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন এবং মিনারেলস সবকিছুই থাকে। বিশেষ করে, দুধে থাকা ক্যালসিয়াম আমাদের হাড় এবং দাঁতকে মজবুত করে তোলে। এছাড়া রিবোফ্লাভিন আমাদের শরীরকে এনার্জি দিতে সাহায্য করে, যা দৈনন্দিন কাজের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

প্রোটিনের দিক থেকে, দুধ পেশি গঠনে সাহায্য করে, যা বিশেষ করে শিশু ও তরুণদের শারীরিক বৃদ্ধি এবং খেলাধুলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রোটিন শুধু পেশি গঠনে নয়, শরীরের ক্ষত সারাতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে।

যাদের শরীরে শক্তি কম থাকে বা যারা সারাদিন ক্লান্তি অনুভব করেন, তাদের জন্য দুধ একটি ভালো পথ্য। অনেকেই বলেন যে তারা অনেক খাবার খেলেও ওজন বাড়াতে পারছেন না। ডাঃ সাইফুল ইসলাম পিটি এই ধরনের ব্যক্তিদেরকে পরামর্শ দেন, তারা যেন প্রতিদিন দুধ বা দুধ দিয়ে তৈরি খাবার খাওয়ার চেষ্টা করেন। দুধের ক্যালরি এবং প্রোটিন তাদের ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।

এছাড়া, দুধে থাকা ক্যালসিয়াম শুধু হাড় ও দাঁতের জন্যই নয়, আমাদের হার্ট, পেশি এবং নার্ভের কাজ করাতেও সাহায্য করে। দুধে থাকা ভিটামিন ডি ক্যালসিয়ামের শোষণকে উন্নত করে, যা আমাদের শরীরে হাড়ের সুস্থতায় প্রয়োজন।

আনারস ও দুধ একসাথে খেলে কি হয়

আনারস ও দুধ একসাথে খেলে কি হয়?

অনেকেরই ধারণা, দুধ আর আনারস একসঙ্গে খেলে শরীরে ক্ষতি হতে পারে বা বিষক্রিয়া হতে পারে। কিন্তু ডাঃ সাইফুল ইসলাম পিটি জানান, এই ধারণার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। আনারস হলো ভিটামিন সি সমৃদ্ধ টক ফল এবং দুধ একটি পুষ্টিকর খাবার। যদিও সাধারণত টক ফল দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া হয় না, কারণ পাকস্থলী সেভাবে হজম করতে অভ্যস্ত নয়। কিছু মানুষের ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স থাকায় তারা দুধ খেলে পেটে গ্যাস বা ফাঁপা অনুভব করেন। তবে দুধ আর আনারস একসঙ্গে খেলে বিষক্রিয়া হবে বা মৃত্যুর ঝুঁকি থাকবে এমন কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এখনো মেলেনি।

তাই, দুধ আর আনারস একসঙ্গে খাওয়ার ব্যাপারে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে যদি কারো হজমের সমস্যা বা ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স থাকে, তাহলে একটু সতর্ক থাকা উচিত। শরীরের হজম ক্ষমতা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে, তাই দুধ আর আনারস একসঙ্গে খেলে কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না, তা দেখে নেওয়া ভালো। সাধারণত দুধ ও টক ফল একসঙ্গে না খাওয়াই ভালো, তবে কোনোদিন খেয়ে ফেললেও বেশি চিন্তার কিছু নেই, কারণ এটি বিষক্রিয়া তৈরি করে না।

আরও জানুন: কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

আরও জানুন: কালোজিরা খাওয়ার সঠিক নিয়ম । সকালে কালোজিরা খাওয়ার বিশেষ নিয়ম । হাদিসে কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম কি?

আরও জানুন: পেনিসে টুথপেস্ট লাগালে কি হয়? এটি দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়

তথ্য সূত্র

Healthline — Should You Mix Pineapple and Milk?

Banglajol — Food taboo of taking pineapple and milk at a time

Dhaka Tribune — Debunking the pineapple and milk debate

Research Gate — Food taboo of taking pineapple and milk at a time

Seasoned Advice — Mixing pineapple with Curd/Milk

Swasthi’s Recipes — Pineapple Milkshake

সাধারণ জিজ্ঞাসা

রাতে আনারস খেলে সাধারণত কোনও সমস্যা হয় না, তবে আনারস টক হওয়ার কারণে কিছু মানুষের পেটে অস্বস্তি হতে পারে। অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকা ভালো।

অনেকে বিশ্বাস করেন যে আনারস খেলে পিরিয়ড ত্বরান্বিত হতে পারে, কারণ এতে ব্রোমেলাইন নামক একটি এনজাইম আছে যা রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সহায়ক। তবে বৈজ্ঞানিকভাবে এটি প্রমাণিত নয়।

খালি পেটে আনারস খেলে কিছু মানুষের পেটে অম্লতা বা জ্বালাপোড়া হতে পারে, কারণ আনারস টক ফল। তাই খালি পেটে না খাওয়াই ভালো।

গর্ভাবস্থায় আনারস খাওয়া নিরাপদ, তবে বেশি পরিমাণে খাওয়া ঠিক নয়। এতে থাকা ব্রোমেলাইন নামক এনজাইম পেটের অস্বস্তি বা অম্লতা বাড়াতে পারে। তাই পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।

আনারস খাওয়ার পর পানি খেলে সাধারণত কোনও সমস্যা হয় না। তবে কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এতে হালকা অম্লতা বা পেটের অস্বস্তি হতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top