অতিরিক্ত মাস্টারবেশন করলে কি হয় এবং এটি করলে কি ক্ষতি হয়? এই প্রশ্নটি অনেকের মনেই ঘুরপাক খায়। বিশেষ করে বয়ঃসন্ধিকালে বা তারুণ্যের শুরুতে এই বিষয়ে কৌতূহল এবং দ্বিধা কাজ করা স্বাভাবিক। আমাদের সমাজে যৌনতা এবং এর সাথে জড়িত বিষয়গুলি নিয়ে খোলামেলা আলোচনার অভাব থাকায় অনেক ভুল ধারণা প্রচলিত আছে।
এই ব্লগ পোস্টে আমরা অতিরিক্ত মাস্টারবেশন বলতে কী বোঝায়, এর সম্ভাব্য প্রভাবগুলি কী হতে পারে এবং এই বিষয়ে প্রচলিত কিছু ভুল ধারণা ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করব। মনে রাখবেন, এই আলোচনাটির উদ্দেশ্য কোনো প্রকার ভয় দেখানো বা অনুৎসাহিত করা নয়, বরং একটি সুস্থ এবং বিজ্ঞানসম্মত দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি উপলব্ধি করা।
মাস্টারবেশন করলে কি হয়?
হস্তমৈথুন বা স্বমেহন হল একটি স্বাভাবিক ও স্বাস্থ্যকর যৌন অভ্যাস। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে ব্যক্তি নিজের যৌন সুখ লাভের জন্য নিজেই নিজের যৌনাঙ্গ স্পর্শ করে উত্তেজিত করে। শুধুমাত্র যৌন সুখ বা আনন্দ পাওয়ার জন্য নয়, হস্তমৈথুনের আরও অনেক উপকারী দিক রয়েছে।
নিয়মিত হস্তমৈথুন মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। বর্তমানের ব্যস্ত এবং চাপপূর্ণ জীবনে অনেক সময় মানসিক অস্থিরতা, দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগ দেখা দেয়। হস্তমৈথুনের সময় শরীর থেকে এন্ডোরফিন নামক ‘ভালো লাগার হরমোন’ নিঃসৃত হয়, যা মন ভালো রাখতে সাহায্য করে এবং দুশ্চিন্তা কমায়।
এছাড়াও, হস্তমৈথুন হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। যৌন উত্তেজনার সময় শরীরে টেস্টোস্টেরন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিক থাকে, যা শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতার জন্য জরুরি।
বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত হস্তমৈথুন পুরুষদের প্রস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। কারণ, প্রস্টেট গ্রন্থিতে জমে থাকা দূষিত পদার্থ এবং পুরনো শুক্রাণু শরীর থেকে বেরিয়ে যায়, ফলে প্রস্টেটের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
মাস্টারবেশন করলে কি ক্ষতি হয়?
অনেকেই নিজের ইচ্ছায় কিংবা কৌতূহলবশত মাস্টারবেশন করে থাকেন। এটি একটি স্বাভাবিক প্রবৃত্তি হলেও অতিরিক্ত মাত্রায় বা নিয়মিতভাবে মাস্টারবেশন করলে শরীর ও মনে কিছু নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। চলুন এবার জানি, মাস্টারবেশন করলে কি ধরনের ক্ষতি হতে পারেঃ
১. লিঙ্গের শক্তি ও দৃঢ়তা কমে যেতে পারে
নিয়মিত এবং অতিরিক্ত মাস্টারবেশন পুরুষাঙ্গের স্বাভাবিক দৃঢ়তা কমিয়ে দিতে পারে। এর ফলে, মহিলাদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের সময় পর্যাপ্ত দৃঢ়তা বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। বিশেষ করে বারবার ঘর্ষণের কারণে নার্ভ এবং পেশীতে দুর্বলতা দেখা দিতে পারে, যার ফলে লিঙ্গ শিথিল হতে শুরু করে।
২. লিঙ্গের শিরা স্পষ্ট হয়ে ওঠা এবং সৌন্দর্য হারানো
অনেকবার হস্তমৈথুন করলে পুরুষাঙ্গের উপরিভাগের একাধিক শিরা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এই দৃশ্যমান শিরাগুলি পুরুষাঙ্গের স্বাভাবিক চেহারাকে বদলে দিতে পারে এবং আকর্ষণ কমে যেতে পারে, যা আত্মবিশ্বাসের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
৩. মহিলাদের মধ্যে ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা
মেয়েদের ক্ষেত্রে যদি সঠিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় না রাখা হয় এবং বারবার মাস্টারবেশন করা হয়, তাহলে বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন হতে পারে। বিশেষ করে যোনি পথে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন, ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI) এবং চর্মরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৪. শুক্রাণু প্রস্তুতকারক হরমোন দুর্বল হয়ে পড়া
অতিরিক্ত মাস্টারবেশন পুরুষদের শরীরে শুক্রাণু উৎপাদনের জন্য দায়ী টেস্টোস্টেরন হরমোনের কার্যক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে। এর ফলে শুক্রাণুর গুণমান ও পরিমাণ কমে যেতে পারে, যা ভবিষ্যতে প্রজনন ক্ষমতার ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
৫. মানসিক চাপ ও অপরাধবোধ
অনেকে মাস্টারবেশনের পর দুঃখ, অপরাধবোধ বা মানসিক অস্থিরতায় ভোগেন। অতিরিক্ত মাস্টারবেশন কখনও কখনও মানসিক চাপ বাড়াতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটাতে পারে।
৬. দৈহিক শক্তি ও মনোযোগের অভাব
অতি মাত্রায় মাস্টারবেশন শরীরের শক্তি কমিয়ে দিতে পারে। ফলস্বরূপ, দৈনন্দিন কাজকর্মে উদ্যম কমে যেতে পারে এবং পড়াশোনা বা কাজের প্রতি মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।
অতিরিক্ত মাস্টারবেশন করলে কি হয়?
অতিরিক্ত মাস্টারবেশন করলে কি হয় এই বিষয়টি একটি পুরুষের জন্য জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চলুন অতিরিক্ত মাস্টারবেশনের খারাপ দিক গুলো জেনে নেই –
শারীরিক প্রভাব
অতিরিক্ত মাস্টারবেশন করলে কি হয়? প্রথমত, শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা কমে যায়, যা পুরুষের যৌনস্বাস্থ্য, পেশী গঠন ও সামগ্রিক শক্তি বজায় রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাস্টারবেশনের সময় শরীর থেকে স্পার্ম বেরিয়ে গেলে সাময়িকভাবে ক্লান্তি, দুর্বলতা ও অবসাদ দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত মাস্টারবেশন করলে কর্টিসোল নামক স্টেরয়েড হরমোনের উৎপাদন বেড়ে যায়, যা দীর্ঘমেয়াদে শরীরে ক্রনিক ফ্যাটিগ বা দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি তৈরি করতে পারে।
এছাড়া, অতিরিক্ত মাস্টারবেশন করলে কি হয়? অনেক সময় পিঠে ব্যথা, কোমরে অস্বস্তি, যৌনাঙ্গে ফোলা বা সংবেদনশীলতা কমে যাওয়া, এমনকি গ্রোইন ও টেস্টিকুলারে ব্যথা দেখা দিতে পারে। লিঙ্গের আকারে সামান্য পরিবর্তন, চুল পড়া, ওজন কমে যাওয়া, এবং শরীরের সামগ্রিক দুর্বলতাও হতে পারে।
মানসিক ও সামাজিক প্রভাব
মাস্টারবেশন করার সময় ব্রেনে ডোপামিন ও এন্ডোরফিনের মতো ‘ফিল-গুড’ কেমিক্যাল নিঃসৃত হয়, যা মন ভালো করে দেয়। কিন্তু অতিরিক্ত মাস্টারবেশন করলে এই কেমিক্যালের উপর নির্ভরতা বেড়ে যায় এবং ব্রেন বারবার এই আনন্দ পাওয়ার জন্য মাস্টারবেশনের প্রতি আসক্তি তৈরি করে। ফলে, অপরাধবোধ, আত্মবিশ্বাসের অভাব, উদ্বেগ, মনোযোগের ঘাটতি, এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা দেখা দিতে পারে।
অনেক সময় অতিরিক্ত মাস্টারবেশন করলে কি হয়? ব্যক্তি বাস্তবিক যৌন আকাঙ্ক্ষা কমে যাওয়া, সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্কের দূরত্ব তৈরি হয়, এবং পর্নোগ্রাফি বা অসামাজিক আচরণের প্রতি আসক্তি বাড়ে। এক্ষেত্রে, দৈনন্দিন কাজকর্ম, পড়াশোনা বা পেশাগত জীবনেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
যৌনস্বাস্থ্য ও উর্বরতা
অনেকে মনে করেন, অতিরিক্ত মাস্টারবেশন করলে কি হয়? সন্তান ধারণে সমস্যা হয় কি না? বাস্তবে, নিয়মিত মাস্টারবেশন করলে সাধারণত উর্বরতা কমে না, বরং পুরনো শুক্রাণু বেরিয়ে যাওয়ায় নতুন ও স্বাস্থ্যকর শুক্রাণু তৈরি হয়। তবে, অতিরিক্ত মাস্টারবেশন করলে শরীর থেকে বেশি পরিমাণে শুক্রাণু বেরিয়ে যাওয়ার ফলে সাময়িকভাবে শুক্রাণুর ঘনত্ব কমে যেতে পারে, যা সন্তান ধারণের জন্য কিছুটা অসুবিধা তৈরি করতে পারে।
অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
অতিরিক্ত মাস্টারবেশন করলে আরও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যেমন, চুল পড়া, চোখের ক্লান্তি, স্মরণশক্তি কমে যাওয়া, মাথা ব্যথা, শরীর ব্যথা, যৌনাঙ্গ দুর্বল হয়ে পড়া, হজম ও প্রস্রাবের সমস্যা, এমনকি মানসিক বিকৃতি ও খিটখিটে মেজাজ। দাম্পত্য জীবনে সমস্যা, অপরাধবোধ, এবং আত্মবিশ্বাসের অভাবও হতে পারে।
অতিরিক্ত মাস্টারবেশন করলে কি হয়? এই অভ্যাস থেকে মুক্তির উপায়
যদি মনে হয়, অতিরিক্ত মাস্টারবেশন করলে কি হয়? কিছু হওয়ার মতো নেই। আপনার যদি দৈনন্দিন জীবন, সম্পর্ক, পড়াশোনা বা কাজের ক্ষতি হচ্ছে, তাহলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সঙ্গীর সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা, নতুন শখ বা কাজে মনোযোগ দেওয়া, অথবা মানসিক চাপ কমানোর বিকল্প উপায় খোঁজা যেতে পারে।
উপসংহার
সবশেষে বলা যায়, অতিরিক্ত মাস্টারবেশন করলে শারীরিক, মানসিক ও যৌনস্বাস্থ্য, এমনকি সামাজিক জীবনেও নানা নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় হস্তমৈথুন স্বাভাবিক ও উপকারী হলেও, যখন এটি অতিরিক্ত মাত্রায় হয়ে যায়, তখন ক্লান্তি, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, সামাজিক ও ব্যক্তিগত জীবনে সমস্যা, এবং সাময়িকভাবে উর্বরতা কমে যাওয়ার ঝুঁকি দেখা দিতে পারে। তাই অতিরিক্ত মাস্টারবেশন করলে কি হয় তা ভালোভাবে বুঝে, এই অভ্যাসটি নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত জরুরি।
আপনার শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা পুনরুদ্ধারে “ইয়েস মেন” এ ইউরোপিয়ান প্রযুক্তির মাধ্যমে পেলভিক স্টিমুলেশন, শক ওয়েভ থেরাপি, আকুপাংচার, rTMS (repetitive Transcranial Magnetic Stimulation), এবং PEMF (Pulsed Electromagnetic Field) থেরাপি সেবা প্রদান করা হয়। উন্নত চিকিৎসা সুবিধা গ্রহণের জন্য আজই অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিন। যোগাযোগ করুন বনানী অথবা উত্তরা শাখায়ঃ +8801767315089।
বিস্তারিত জানুন: পুরুষের ডায়াবেটিস হলে কি সন্তান হয়?
বিস্তারিত জানুন: ছেলেদের হস্ত মৈথুনের কত দিন পর করা উচিত?