কিশমিশ ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা আমরা অনেকেই জানি না। রান্নায় কিশমিশ দিলে খাবারের স্বাদ দ্বিগুণ বেড়ে যায়। অনেকে আবার এমনিতেও কিশমিশ খান। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, রান্নায় দিয়ে কিংবা শুধু খাওয়ার বদলে কিশমিশ ভিজিয়ে খেতে পারলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। কিশমিশ ভিজিয়ে খেলে শরীরে আয়রনের মাত্রা বাড়ে, যা রক্তাল্পতা দূর করতে সাহায্য করে। কিশমিশে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং হজমশক্তি উন্নত করে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ভিজিয়ে রাখা কিশমিশ খেলে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। কিশমিশে থাকা ফাইবার হজমশক্তি বাড়ায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
কিসমিস খেলে কি হয়? এবং কিশমিশ ভিজিয়ে খেলে যেসব উপকারিতা পাওয়া যায় –
হজমশক্তি বাড়ায়
ভেজানো কিসমিসে প্রচুর ফাইবার থাকে, যা হজমশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে। এর ফলে হজম ঠিক থাকে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও অনেকটাই দূর হয়, যা আপনাকে আরাম ও স্বস্তি দেয়।
আয়রন সমৃদ্ধ
কিশমিশ আয়রনের খুব ভালো উৎস। বিশেষ করে ভেজানো কিশমিশে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। আয়রনের অভাবজনিত রোগ অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
হৃদরোগের জন্য উপকারী
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভেজানো কিশমিশ একটি উপকারী উপাদান। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকলে হৃৎপিণ্ড ভালো থাকে। কিশমিশে রয়েছে পটাশিয়ামের মতো খনিজ, যা হৃৎপিণ্ডের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
হাড়ে পুষ্টি যোগায়
কিশমিশ ক্যালশিয়াম সমৃদ্ধ একটি খাবার। বিশেষ করে ভেজানো কিশমিশ ক্যালশিয়ামের খুব ভালো উৎস। ক্যালশিয়ামের ঘাটতি পূরণ করে হাড়কে মজবুত রাখে।
অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ
কিশমিশে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট। অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ফ্রি র্যাডিক্যালের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে শরীরকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
কিশমিশে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা আমাদের দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে। পেট ভরা থাকার ফলে বার বার খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে
কিশমিশে থাকা অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট আমাদের চোখের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট বয়সজনিত চোখের সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
ত্বকে পুষ্টি যোগায়
কিশমিশে থাকা ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের ফ্রি র্যাডিক্যালের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। নিয়মিত কিশমিশ ভিজিয়ে খেলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে।
কিশমিশ ভিজিয়ে খাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, সঠিক পরিমাণে খেতে হবে এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর খাবারের সঙ্গে সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।
কিসমিস কি থেকে তৈরি হয়?
কিশমিশ বা কিসমিস হলো শুকনো আঙ্গুর, যা ইংরেজিতে রেইসিন নামে পরিচিত। কিশমিশ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে উৎপাদিত হয় এবং এটি সরাসরি খাওয়া যায় অথবা বিভিন্ন খাদ্য প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয়। এই মিষ্টি ও পুষ্টিকর শুকনো ফলটি প্রাচীনকাল থেকে শক্তি বা ক্যালরির চমৎকার উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিশমিশ বিভিন্ন মিষ্টান্ন, পায়েস, পোলাও এবং সালাদে ব্যবহৃত হয়, যা খাবারের স্বাদ ও পুষ্টিগুণ বাড়িয়ে তোলে। এটি শিশুদের জন্যও একটি পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে পরিচিত, কারণ এটি সহজে হজম হয় এবং তাৎক্ষণিক শক্তি প্রদান করে।
আরও জানুন: পিনাট বাটার খাওয়ার উপকারিতা কি? এটি খেলে কি ওজন বাড়ে ?
কিসমিস কি আঙ্গুর থেকে হয়?
কিসমিস কি আঙ্গুর থেকে হয়? হ্যাঁ, কিসমিস আসলেই আঙ্গুর থেকে তৈরি হয়। আঙ্গুর শুকানোর মাধ্যমে কিসমিস তৈরি করা হয়। আঙ্গুর যখন সম্পূর্ণরূপে পেকে যায়, তখন সেগুলোকে রোদে শুকানো হয় বা বিশেষ ড্রায়ারের সাহায্যে শুকানো হয়। শুকানোর প্রক্রিয়ায় আঙ্গুরের ভিতরের পানির পরিমাণ কমে যায় এবং আঙ্গুর ছোট হয়ে কিসমিসে পরিণত হয়। কিসমিসে থাকে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ, যেমন ফাইবার, ভিটামিন, এবং মিনারেল। আঙ্গুর দৈনন্দিন জীবনে বিশেষভাবে জনপ্রিয়, কারণ এটি শুধু স্বাস্থ্যকর নয় বরং সহজে বহনযোগ্য এবং খাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকে সবসময়।
কিসমিস গাছ কেমন হয়?
আপনাদের সুবিধার জন্য আমরা কিসমিস গাছ এর একটি ছবি তুলে ধরছি। কিসমিস এর গাছ আসলে কেমন হয়ে থাকে। চলুন দেখে নেই –
আপেল এর উপকারিতা কি? আপেল খাওয়ার সঠিক সময় কখন? তা জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ুন।
তথ্যসূত্র
Times of India – Benefits of eating 6 soaked black raisins on an empty stomach daily
NDTV – 10 Health Benefits Of Raisin Water
Healthline – What Is Raisin Water, and Does It Have Benefits?
সাধারণ জিজ্ঞাসা
কিসমিস কখন খেলে ভালো হয়?
কিসমিস সকালে খালি পেটে খেলে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়।
খালি পেটে কিসমিস এর জল খেলে কি হয়?
খালি পেটে কিসমিসের জল খেলে হজমশক্তি ভালো হয় এবং শক্তি বাড়ে, যা আপনাকে সারা দিন তরতাজা রাখে।
কিসমিসের পানি কি মোটা হয়?
না, কিসমিসের পানি খেলে মোটা হওয়ার সম্ভাবনা কম, বরং এটি শরীরের পুষ্টি যোগায় এবং আপনাকে সুস্থ রাখে।
কিসমিস খেলে কি ঘুম আসে?
হ্যাঁ, কিসমিস খেলে ঘুম ভালো হয়, কারণ এতে থাকা ম্যাগনেসিয়াম এবং ক্যালসিয়াম শরীরকে শিথিল করে এবং ভালো ঘুম আনতে সাহায্য করে।