শরীর ঠান্ডা রাখতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার উপকারিতা অনেক। তবে ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম নিয়ে নানা কথা প্রচলিত রয়েছে। পুষ্টিবিদরা বলছেন, খাওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে ইসবগুলের ভুসি পানিতে মিশিয়ে পান করা উচিত। ইসবগুলের ভুসি শুধু কোষ্ঠকাঠিন্য নয়, শরীরের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানেও কার্যকরী। এটি প্রাকৃতিক ফাইবার হিসেবে কাজ করে, যা হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং অন্ত্রের চলাচল নিয়মিত করে। এতে উপস্থিত জলীয় উপাদান শরীরের আর্দ্রতা বজায় রাখে এবং ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করে। এটি কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
ইসবগুলের ভুসি মিশ্রিত পানি নিয়মিত পান করলে শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমানো যায়, ফলে ওজন কমাতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি বিশেষ উপকারী, কারণ এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়ক। ইসবগুলের ভুসি ব্যবহারের মাধ্যমে ত্বকের সমস্যাও দূর করা সম্ভব। এটি ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে এবং বিভিন্ন ত্বকের রোগ প্রতিরোধ করে।
ইসবগুলের ভুসি কী?
ইসবগুলের ভুসি মূলত এক প্রকার দ্রবণীয় ফাইবার যা সাইলিয়াম (প্ল্যান্টাগো ওভাটা) বীজের খোসা থেকে প্রস্তুত করা হয়। এটি রেচক বা ল্যাক্সেটিভ হিসেবেও পরিচিত, যা অন্ত্রের কার্যক্রম উন্নত করতে সাহায্য করে। ইসবগুলের ভুসি মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গের সুস্থতা রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখে। হার্ট বা হৃৎপিণ্ড এবং অগ্নাশয়ের সুস্থতায়ও এর কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, ইসবগুলের ভুসি ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি পেটে দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে, ফলে অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণের প্রবণতা কমে। ইসবগুলের ভুসি শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে, যা ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করে।
আরও জানুন: কালো রসুনের উপকারিতা (black garlic benefits) জেনে নিন!!
ইসবগুলের ভুষির পুষ্টিগুণ
১ টেবিল চামচ ইসবগুলের ভুষিতে ৫৩% ক্যালোরি, ০% ফ্যাট, ১৫ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ১৫ গ্রাম শর্করা, ৩০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, এবং ০.৯ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে। ইসবগুলের ভুষি প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ার সমস্যা কমাতে কার্যকর। অনেকেই প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়ার সমস্যায় ভুগেন, যা খুবই অস্বস্তিকর। ইসবগুলের ভুষি নিয়মিত সেবনে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এটি শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে এবং মূত্রনালীতে সৃষ্ট সংক্রমণ হ্রাস করে।
ইসবগুলের ভুসির উপকারিতা
ইসবগুলের ভুসি একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং উপকারী প্রাকৃতিক খাদ্য উপাদান। ইসবগুলের ভুসির উপকারিতা গুলো কি কি চলুন দেখে নেই –
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
ইসবগুল কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে অসাধারণ ভূমিকা রাখে। এর মিউসিলেজিনাস গুণাগুণের কারণে আলসারজনিত পেট ব্যথা কম অনুভূত হয়। ইসবগুলে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যামাইনো অ্যাসিড রয়েছে, যা প্রতিদিন এক গ্লাস পানিতে দুই বা তিন চামচ ইসবগুল মিশিয়ে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে।
প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর করে
প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া থেকে মুক্তি পেতে ইসবগুল অত্যন্ত কার্যকর। যারা প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ায় ভুগছেন, তারা নিয়মিত ইসবগুলের ভুসি খেলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। আখের গুড়ের সঙ্গে ইসবগুলের ভুসি মিশিয়ে সকালে ও বিকেলে খেলে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া কমে যায়।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করে
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে ইসবগুলের ভুসি এক অনন্য উপায়। এটি পাকস্থলীর ভেতরের দেয়ালে প্রতিরক্ষামূলক স্তর তৈরি করে, যা অ্যাসিডিটির বার্ন থেকে পাকস্থলীকে রক্ষা করে। এছাড়া, এটি হজম ঠিক রাখার জন্য পাকস্থলীর বিভিন্ন এসিড নিঃসরণে সাহায্য করে।
ডায়রিয়া প্রতিরোধ করে
ডায়রিয়া প্রতিরোধেও ইসবগুলের ভুসি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি দইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে ডায়রিয়া থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। দইয়ে থাকা প্রোবায়োটিক পাকস্থলীর ইনফেকশন সারাতে সাহায্য করে, আর ইসবগুল তরল মলকে শক্ত করতে সহায়তা করে। ফলে ডায়রিয়া দ্রুত সেরে ওঠে।
হার্ট ভালো রাখে
ইসবগুলের ভুসি নিয়মিত খেলে হার্ট ভালো থাকে। এতে থাকা খাদ্যআঁশ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। ইসবগুল পাকস্থলীর দেয়ালে এক ধরনের পাতলা স্তর সৃষ্টি করে, যা খাদ্য থেকে কোলেস্টেরল শোষণে বাধা দেয়। এছাড়াও এটি রক্তের অতিরিক্ত কোলেস্টেরল সরিয়ে দেয়, ফলে ধমনীতে ব্লক সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা কমাতে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইসবগুলের ভুসি অত্যন্ত উপকারী। এতে থাকা জিলাটিন নামক উপাদান দেহে গ্লুকোজের শোষণ ও মুক্তি প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করে, যার ফলে রক্তে সুগারের পরিমাণ সহজে বাড়তে পারে না। এর ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
অন্যান্য উপকারিতা
ইসবগুলের ভুসি হজমের সমস্যা, কোলেস্টেরল, উচ্চ-রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং ওজন কমাতেও বিশেষ উপকারী। এ ছাড়া এটি ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে, শরীরের বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে, এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
ইসবগুলের ভুসির এই বহুমুখী উপকারিতার কারণে এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। নিয়মিত ইসবগুলের ভুসি গ্রহণের মাধ্যমে আমরা একটি সুস্থ ও সুন্দর জীবন উপভোগ করতে পারি।
হানি নাট খাওয়ার নিয়ম | হানি নাট এর উপকরণ কি? তা জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ুন।
ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম
ইসবগুল অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণ পানির সঙ্গে খেতে হবে। এক গ্লাস পানিতে এক চামচ ভুসি মিশিয়ে ভালোভাবে নেড়ে মিশিয়ে নিন। মিশানোর সঙ্গে সঙ্গেই খেয়ে ফেলতে হবে। ইসবগুল খাওয়ার পর আরও এক গ্লাস পানি পান করা উচিত। এটি হজমের প্রক্রিয়াকে সহজ করে এবং অন্ত্রের গতিশীলতা বাড়ায়। ইসবগুল খাওয়ার সময় অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে। পানি ছাড়া ইসবগুল খেলে এটি গলায় আটকে যেতে পারে এবং শ্বাসকষ্ট হতে পারে। তাই প্রতিবার ইসবগুল খাওয়ার পর পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা উচিত। প্রতিদিন সকালে বা রাতে ইসবগুল খাওয়া যেতে পারে। যাদের উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিস আছে, তাদের জন্য ইসবগুল বিশেষভাবে উপকারী। এটি হজমশক্তি বাড়ায় এবং পেটের ফোলা কমায়। ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার ফলে শরীর সুস্থ থাকে এবং ত্বক ভালো থাকে। নিয়মিত ইসবগুল খাওয়ার ফলে পেটের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
সুতরাং, ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার সময় পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে ভুলবেন না। এটি আপনার শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে এবং হজমশক্তি বাড়াবে। নিয়মিত ইসবগুল খেলে আপনি সুস্থ থাকবেন এবং পেটের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
তথ্যসূত্র
Pharm Easy – Psyllium Husk (Isabgol): Uses, Benefits & Side Effects
Medical News Today – 8 benefits of psyllium husk
Mount Sinai – Psyllium
WebMD – Psyllium Husk Fibre Oral Powder – Uses, Side Effects, and More
Cleveland Clinic – Should You Be Using Psyllium Husk?
Health – Health Benefits of Psyllium Husk
সাধারণ জিজ্ঞাসা
প্রতিদিন ইসবগুল খেলে কি ক্ষতি হয়?
প্রতিদিন ইসবগুল খেলে কিছু মানুষের জন্য কোলন ব্লকেজ বা পেট ফাঁপার সমস্যা হতে পারে, তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ইসবগুলের ভুসি কতক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে হবে?
ইসবগুলের ভুসি রাতে ভিজিয়ে রাখলে পরের দিন সকালে খেতে সহজ হয়।