সরিষার তেল শুধু রান্নার জন্যই নয়, চুলের যত্নেও দারুণ উপকারী। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে দূষণ, রাসায়নিক পদার্থ ও নানা কারণের জন্য চুল শুষ্ক, রুক্ষ ও দুর্বল হয়ে পড়ে। অনেকেই চুল পড়া বা খুশকির সমস্যায় টেনশনে থাকেন। কিন্তু আপনি জানেন কি, চুলে সরিষার তেলের উপকারিতা অনেক?
সরিষার তেলে ভিটামিন এ, ডি, ই, কে, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা চুলকে করে তোলে মসৃণ, স্বাস্থ্যজ্বল এবং সুন্দর। এ ছাড়া এতে থাকা জিঙ্ক, বিটা ক্যারোটিন ও সেলেনিয়াম চুলের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটায় এবং চুলকে করে আরও শক্তিশালী। নিয়মিত সরিষার তেল মালিশ করলে চুলের ফলিকল মজবুত হয়ে চুল পড়া কমে এবং চুল দ্রুত লম্বা হতে শুরু করে।
চুলে সরিষার তেল মালিশ করলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে, ফলে চুলের গোড়া শক্তিশালী হয়। এতে থাকা জিঙ্ক, বিটা ক্যারোটিন, সেলেনিয়াম এবং অন্যান্য উপকারী উপাদান চুলের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটায়।
চুলে সরিষার তেল ব্যবহারে যেসব সমস্যার সমাধান পেতে পারেন
আমরা অনেকেই জানি না, সরিষার তেল চুলের যত্নে কতটা কার্যকরী হতে পারে। সাধারণত আমরা চুলের যত্নে নারিকেল তেল ব্যবহার করি, কিন্তু সরিষার তেলও চুলের জন্য খুবই উপকারী। মাঝে মাঝে সরিষার তেল দিয়ে মাথার ত্বকে ম্যাসাজ করলে চুলের জন্য অনেক উপকার পাওয়া যায়। তবে তেল দেওয়ার পর অবশ্যই চুল ভালো করে সুগন্ধযুক্ত শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে, যাতে তেলের ঝাঁজ বা গন্ধ না থাকে।
প্রাকৃতিক কন্ডিশনার
সরিষার তেলকে প্রাকৃতিক কন্ডিশনার বলা যেতে পারে, কারণ এতে থাকে আলফা ফ্যাটি অ্যাসিড। এই উপাদানটি চুলের জন্য খুবই উপকারী, কারণ এটি চুলকে সুন্দর, নরম এবং উজ্জ্বল করে তোলে। নিয়মিত সরিষার তেল ব্যবহারে চুল দ্রুত বাড়ে এবং মজবুত হয়। আলফা ফ্যাটি অ্যাসিড চুলের শুষ্কতা কমিয়ে আনে এবং চুলের নমনীয়তা বাড়ায়।
চুল পড়া বন্ধ করে
আজকাল অনেকেই চুল পড়ার সমস্যায় ভুগছে। চুল পড়ার কারণে চুলের ফলিকল দুর্বল হয়ে যায়, যা চুলের গোড়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। কিন্তু সরিষার তেলে থাকা উপাদানগুলো চুলের ফলিকলকে মজবুত করে, ফলে চুল পড়া ধীরে ধীরে কমে যায়। নিয়মিত সরিষার তেল দিয়ে মাথার ত্বকে ম্যাসাজ করলে চুল পড়ার হার অনেক কমে যায়।
চুল লম্বা হতে সাহায্য করে
চুল দ্রুত লম্বা করতে চাইলে সরিষার তেল অনেক উপকারী। এতে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। নিয়মিত তেল ব্যবহার করলে চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং চুল দ্রুত বড় হয়।
রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে
যদি আপনার চুল শুষ্ক, রুক্ষ বা নিষ্প্রাণ হয়ে যায়, তাহলে সরিষার তেল ব্যবহার করে দেখতে পারেন। সরিষার তেল মাথায় ম্যাসাজ করলে মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। এর ফলে চুলের গোড়া শক্ত হয় এবং চুল পড়া কমে যায়। নিয়মিত তেল ম্যাসাজ করলে মাথার ত্বকও ভালো থাকে এবং নতুন চুল গজানোর সম্ভাবনা বাড়ে।
অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান
সরিষার তেলে অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান থাকে, যা মাথার ত্বকের খুশকি ও চুলকানি দূর করতে সাহায্য করে। অনেক সময় ফাঙ্গাসের কারণে চুলের গোড়া দুর্বল হয়ে যায় এবং চুল পাতলা হয়ে যায়। কিন্তু সরিষার তেল ব্যবহারে ফাঙ্গাস দূর হয় এবং চুলের গোড়া আবার মজবুত হয়। এতে চুল পাতলা হওয়ার সমস্যাও সমাধান হয়। যারা খুশকি বা মাথার ত্বকে চুলকানির সমস্যায় ভুগছেন, তারা সরিষার তেল ব্যবহার করে দেখতে পারেন।
চুল পাকা রোধ করে
অকালে চুল পেকে যাওয়া অনেকের জন্যই চিন্তার কারণ। সরিষার তেলে থাকা উপাদানগুলো চুলকে কালো রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত সরিষার তেল ব্যবহার করলে চুল পাকার প্রবণতা কমে যায়। বিশেষ করে রাতে চুলে তেল দিয়ে ঘুমালে চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং চুল কালো ও উজ্জ্বল হয়।
চুল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে
সরিষার তেলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ রয়েছে। বিশেষ করে এতে উচ্চমাত্রার বিটা ক্যারোটিন থাকে, যা শরীরে ভিটামিন এ তে রূপান্তরিত হয়। এই ভিটামিন এ চুল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এছাড়া সরিষার তেলে থাকা অন্যান্য ভিটামিন এবং পুষ্টি উপাদান চুলের গোড়া মজবুত করে এবং চুল পড়া রোধ করে।
চুলে সরিষার তেল ব্যবহারের সময় যে ভুলগুলো এড়ানো উচিত
সরিষার তেল প্রাচীনকাল থেকে চুলের যত্নে ব্যবহৃত হয়ে আসছে, যা চুলের জট ছাড়াতে, রুক্ষ চুল নরম ও উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। নিয়মিত ব্যবহারে চুল নরম ও ঝলমলে হয় এবং ডগা ফাটা ও খুশকির সমস্যাও দূর করতে পারে, কারণ এতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল গুণ রয়েছে। তবে, ঠিকমতো ব্যবহার না করলে এটি চুলের ক্ষতি করতে পারে, তাই ব্যবহারের আগে প্যাচ টেস্ট করা উচিত। তেলতেলে মাথার ত্বকে সরিষার তেল দেওয়া উচিত নয়, কারণ এতে ত্বকের পোরস আটকে চুল শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। রাতে বেশি সময় তেল দিয়ে রাখা উচিত নয়, বরং গোসলের আগে আধা ঘণ্টা তেল মাখাই যথেষ্ট। সবসময় গরম করে তেল মাখলে চুল সহজে তেল শোষণ করে এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায়।
চুলে সরিষার তেল কীভাবে ব্যবহার করবেন?
সরিষার তেল অনেক বছর ধরে চুলের যত্নে ব্যবহার হয়ে আসছে। এটি চুলের জট ছাড়াতে, রুক্ষ চুল নরম ও উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। নিয়মিত ব্যবহার করলে চুল নরম এবং ঝলমলে হয়। তেলটি চুলের ডগা ফাটা ও খুশকি দূর করতেও সাহায্য করে, কারণ এতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল গুণ রয়েছে। কিন্তু যদি ভুলভাবে ব্যবহার করা হয়, তাহলে চুলের ক্ষতি হতে পারে। তাই, সরিষার তেল ব্যবহারের আগে প্যাচ টেস্ট করা প্রয়োজন।
তেলতেলে মাথার ত্বকে সরিষার তেল দেওয়া ঠিক নয়, কারণ এতে ত্বকের পোরস বন্ধ হয়ে চুল শুষ্ক হয়। রাতে বেশি সময় তেল মেখে রাখা উচিত নয়, বরং গোসলের আগে আধা ঘণ্টা তেল মাখাই যথেষ্ট। তেল গরম করে লাগালে চুল তা সহজে শোষণ করে এবং পুষ্টি পায়।
দূষণ বা গরমে অনেক সময় মাথার ত্বক ঘামে ও চুল নোংরা হয়। শীতকালে এই সমস্যা কমে যায়, কিন্তু ঠান্ডার কারণে চুল শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যায়। চুল আর্দ্র রাখার জন্য অনেকেই প্রসাধনী ব্যবহার করেন, কিন্তু এগুলো অনেক ব্যয়বহুল। আপনি চাইলে সরিষার তেল আর অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে ৩০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করতে পারেন। এতে আপনার টাকা সাশ্রয় হবে এবং চুলের সঠিক যত্নও হবে।
শীতকালে চুলের আর্দ্রতা ধরে রাখতে অনেকেই হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করেন। কিন্তু সব মাস্ক সবার চুলের জন্য প্রয়োজন হয় না। সরিষার তেল, লেবুর রস ও ধনে গুঁড়ো মিশিয়ে সপ্তাহে তিন দিন চুলে মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। এতে চুল মজবুত হবে, কন্ডিশন হবে এবং খুশকি দূর হবে।
আপনি চাইলে টক দইয়ের সাথে সরিষার তেল মিশিয়ে মাথার ত্বকে লাগিয়ে হালকা গরম পানিতে ভেজানো তোয়ালে দিয়ে মাথা পেঁচিয়ে ৩০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করতে পারেন। এতে চুল আরও মজবুত হবে। সরিষার তেল শুধু চুলে নয়, ত্বকেও ব্যবহার করা যায়। মুখের জন্য সরিষার তেল দিয়ে ফেসপ্যাকও তৈরি করা যায়।
বিস্তারিত জানুন: শিমুল মূলের উপকারিতা এবং শিমুলের মূল খাওয়ার উপকারিতা কি?
বিস্তারিত জানুন: জয়তুন তেলের উপকারিতা এই তেল ব্যবহারের নিয়ম ও চেনার উপায়
বিস্তারিত জানুন:পুরুষাঙ্গে জোকের তেল ব্যবহারের নিয়ম এবং এটি কি কাজ করে?
তথ্য সূত্র
Healthline — Mustard Oil for Hair
St.Botanica — Is Mustard Oil Good For Hair? – Top 7 Benefits
Wockhardt Hospitals — How to Use Mustard Oil For Hair
Wimpole Clinic — Mustard Oil for Hair Growth: An Evidence-Based Review
Star Health — Mustard Oil for Hair Growth
সাধারণ জিজ্ঞাসা
চুলের জন্য সরিষার তেল কোনটি ভালো কালো না হলুদ?
চুলের জন্য কালো সরিষার তেল — এটি চুলের পুষ্টির একটি চমৎকার উৎস। প্রতিদিন কালো সরিষার তেল দিয়ে মাথার ত্বকে ম্যাসাজ করলে চুল স্বাস্থ্যকর ও লম্বা হবে। তেলটি সমান পরিমাণ নারকেল তেলের সাথে মিশিয়ে, চুলের গোড়া থেকে ডগা পর্যন্ত ম্যাসাজ করুন।
সরিষার তেল কি ধূসর চুল দূর করতে পারে?
ধূসর চুল প্রতিরোধ বা ফিরিয়ে আনার নিশ্চিত কোনো উপায় নেই, তবে চুলের যত্নে সরিষার তেলের হেয়ার মাস্ক যুক্ত করলে চুল ও মাথার ত্বক সুস্থ রাখতে সাহায্য করতে পারে। পাশাপাশি, অ্যালার্জি বা সংবেদনশীলতা আছে কিনা তা জানার জন্য নতুন হেয়ার মাস্ক ব্যবহারের আগে প্যাচ টেস্ট করতে ভুলবেন না।
চুল গজানোর জন্য ক্যাস্টর অয়েল ও সরিষার তেল মিশিয়ে খাওয়া যাবে কি?
হ্যাঁ, আপনি ক্যাস্টর অয়েলের সাথে সরিষার তেল মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। এই মিশ্রণটি চুলের বৃদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করে, কারণ উভয় তেলই মাথার ত্বক ও চুলের পুষ্টির জন্য উপকারী।