ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (আইবিএস)
ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (irritable bowel syndrome) পাচনতন্ত্র তথা পাকস্থলী ও অন্ত্রের একটি দীর্ঘমোয়াদি সমস্যা বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই খাবারে অনিয়ম থেকে এই সমস্যা আসে। বেশীরভাগ মানুষ জীবনের কোন না কোন সময়ে এই সমস্যায় ভুগেন বিশেষ করে মহিলারা এই সমস্যায় বেশী ভুগেন।এই রোগ বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই পরিপাক তন্ত্রের কোন ক্ষতিসাধন বা কোলন ক্যান্সার করে থাকে না উপরন্তু এটা সল্পমেয়াদী ও কিছু নিয়ম কানুন মেনে চললে সহজেই এ সমস্যার থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (IBS) কেন হয়?
আইবিএস রোগীর ক্ষেত্রে অনেক খোঁজাখুজি করেও খাদ্যনালীতে কোন সমস্যা খুঁজে পাওয়া যায় না। খাদ্যনালী সমস্যা থেকে খাদ্য নালীর বাইরের সমস্যাটাই বেশি ধরা পড়ে। আমাদের খাদ্যনালীতে যে বিভিন্ন ধরনের হরমোন বা হরমোন রস ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া করে যার জন্য আমাদের খাদ্যনালির স্বাভাবিক যে গতি সেটা কখনো বেড়ে যায় বা কখনো কমে যায়। সেই ধরনের মধ্যে রয়েছে যেমন সেরোটোনিন নামে একটি পদার্থ এটি যদি কমে বা বেড়ে যায় সেক্ষেত্রে খাদ্যনালীর গতির পরিবর্তন হতে পারে। তাছাড়া অন্যান্য রোগ যেগুলো মানসিক চাপ বাড়িয়ে দেয় সে সব রোগের কারণেও এই রোগ হতে পারে।
এছাড়া খাবারের সাথেও এই রোগের এর সম্পর্ক রয়েছে। যেমন কারো কারো ক্ষেত্রে দুধ জাতীয় খাবার সহজে হজম হতে চায় না। তাদের এই দুধ জাতীয় খাবার খাওয়ার ফলে পেট ফাঁপার সমস্যা দেখা দেয়, ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হয়, পেটে অনেক গ্যাস জমে বারবার গ্যাস বের হয় এই ধরনের সমস্যার কথাও অনেকে বলেন। আবার অনেক শাক জাতীয় খাবার খেলে পেটে গ্যাসের সমস্যা হয়। অনেকের এই শাক জাতীয় খাবার পেটে হজম হয় না।
ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোমের ধরন
এই রোগকে মলের ওপর ভিত্তি করে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন:
১. আইবিএস -সি ( IBS-C) : ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম বা পেটের সমস্যার সাথে কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে।
২. আইবিএস -ডি ( IBS-D): ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম বা পেটের সমস্যার সাথে ডায়রিয়া থাকে ও মলের ঘনত্ব কমে যায়।
৩. আইবিএস-এম (IBS-M) : পেটের সমস্যার সাথে ডায়রিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য একসাথে উপস্থিত থাকে।
আইবিএস এর উপসর্গ
এই রোগকে এর উপসর্গগুলো সবার ক্ষেত্রে ধরন অনুযায়ী আলাদা হতে পারে। কিন্ত কিছু সাধারন উপসর্গ হলো :
- পেটব্যথা হওয়া বিশেষ করে নাভির নিচের অংশে, তবে তা মলত্যাগ বা বায়ু নিঃসরণের পর কমে যেতে পারে।
- কোনো কিছু খেলে পেট ফুলে যাওয়া, বায়ুত্যাগ, বদহজম, হওয়া।
- ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হওয়া অথবা শক্ত অথবা ছোট ছোট পিণ্ড আকারে মলত্যাগ হওয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া।
- পায়খানার সঙ্গে অতিরিক্ত মিউকাস বা আঠালো তরল যাওয়া।
- মলত্যাগের পরও তৃপ্তি না পাওয়া বা পেট ভারি মনে হওয়া।
- পেটের নিচের অংশের যেকোনো এক পাশে বা মাঝখানে ব্যথা বা পেটের ভেতর অস্বস্তি।
- সকালের নাশতার পর দ্রুত মলত্যাগের চাপ অনুভব।
আইবিএস এর লক্ষণ এবং কারণ
ঠিক কি কারণে এই রোগ হয়ে থাকে এটা এখনও জানা যায়নি। তবে ধারনা করা হয়ে থাকে কিছু শরীরবৃত্তীয় ও জীবনযাত্রার ধরনের কারণে এই রোগ হতে পারে।
অন্ত্রের মাংশপেশীর সংকোচন এর হার বেড়ে গেলে। এবং এই সংকোচন এর ফলেই পেটে ব্যাথার সৃষ্টি হয়।পেটের অভ্যন্তরীন কোন প্রত্যঙ্গের কাজে ব্যাঘাত ঘটলে এই সমস্যা হতে পারে। পেটে কোন পরজীবি (বিশেষ করে ব্যাকটেরিয়া) এর সংক্রমনের ফলে আইবিএস হতে পারে। খাবারের অভ্যাসগত হঠাৎ পরিবর্তন। যেমনঃ হঠাৎ অনেক বেশী তৈলযুক্ত, মশলাযুক্ত খাবার খাওয়া,খাবারে অনিয়ম,দুগ্ধজাত খাবার খাওয়া,এলার্জিজাতীয় খাবার খাওয়া এবং পঁচে যাওয়া খাবার গ্রহন করা।
কখন বুঝব যে আইবিএস হয়েছে?
এই রোগ কিন্তু সবার হয় না কারো কারো আইবিএস হয়ে থাকে। এই রোগ হয়েছে এটা আমরা কখন বুঝব, যখন আমরা দেখব যে পৌনঃপুনিকভাবে পেটে ব্যথা বা অস্বস্তি লাগাতার তিনদিন যাবত পর্যন্ত থাকছে এবং পরপর ছয় মাস ধরে এই পেটের ব্যথাটি অবস্থান করছে আর একই সাথে পেটে অস্বস্তি হওয়া, পেট গুর গুর করা, পেট ডাকা, পেট মোচড় দেওয়া এবং মলত্যাগের অনুভূতি হওয়া। মলত্যাগের পরেও পেটে অস্বস্তি অনুভব করা। আরো সমস্যা যেমন পেট ফাঁপা, পেট ফুলে থাকা, পেট ব্যথা করা অসস্তি লাগা, মলত্যাগ না হওয়া দেখা যাচ্ছে টানা তিনদিন পরে মলত্যাগ হওয়া সেই মলত্যাগটি শক্ত বা গুটি গুটি হওয়া। মলত্যাগের পরে মলাশয় জ্বালাপোড়া ও অস্বস্তি লাগা। এই সমস্যাগুলো থাকলেই তখন আমরা বুঝবো আইবিএস হয়েছে।
আইবিএস (IBS) কাদের বেশি হয়ে থাকে?
এই রোগ বিশেষ করে ১৯ বছর থেকে ৪০-৫০ বছর বয়সের মানুষ যারা কর্মক্ষম ও চিন্তাশীল তাদেরই বেশি হয়ে থাকে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষের থেকে দুই থেকে তিন গুন বেশি মহিলা এবং তরুণীরা এই রোগে এ ভুগে থাকেন। এ ছাড়াও মল ধরে রাখতে না পারার রোগে অনেকে ভুগছেন।
আইবিএস এর আধুনিক চিকিৎসা ও প্রতিকার
এই রোগের রোগীদের জন্য খাবার অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা ভূমিকা পালন করে। আইবিএস (IBS) রুগিরা তাদের খাদ্য তালিকা থেকে গম জাতীয় খাবার এবং দুগ্ধ জাতীয় খাবার বাদ দিতে হবে । এর পরিবর্তে অন্যান্য যেসব পুষ্টিকর খাবার আছে যেমন বিভিন্ন ধরনের ফল খেতে পারে।
ফিজিওথেরাপিতে এর চিকিৎসা – ফিজিওথেরাপিতে এই রোগের এর সমস্যা চিকিৎসা রয়েছে। যেমন – আকুপাংচার থেরাপি, ওজোন থেরাপি। আকুপাংচার এবং ওজোনথেরাপির মাধ্যমে এই রোগের সমস্যার সমাধান সম্ভব। আকুপাংচার এবং ওজন অত্যাধুনিক অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্ট। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে এটা প্রমাণিত যে, এই দুটো থেরাপি সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং কার্যকরী।