আমাদের সমাজে এমন অনেক বিষয় আছে যা নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করা কঠিন। ব্যক্তিগত কৌতূহল এবং জিজ্ঞাসা মনে ঘুরপাক খেলেও, সঠিক তথ্য বা উত্তরের অভাবে অনেক সময় ভুল ধারণা তৈরি হতে পারে। তেমনই দুটি প্রশ্ন প্রায়ই শোনা যায়, মাস্টারবেশন করলে কি বাচ্চা হয় না এবং এটি করলে কি গোসল ফরজ হয়?
এই প্রশ্নগুলো একদিকে যেমন আমাদের প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত, তেমনই অন্যদিকে ধর্মীয় অনুশাসনের সাথেও জড়িত। এই ব্লগ পোস্টে আমরা চেষ্টা করব এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করতে এবং একটি স্পষ্ট ধারণা দেওয়ার। যদি আপনার মনেও এই বিষয়গুলো নিয়ে কোনো দ্বিধা বা প্রশ্ন থাকে, তাহলে এই ব্লগটি আপনার জন্য।
মাস্টারবেশন করলে কি রোজা হয়?
মাস্টারবেশন করলে কি রোজা হয়? রমজান মাসে অনেকেই এই প্রশ্নটা করে, আর এটা খুবই স্বাভাবিক। ইসলাম অনুযায়ী, রোজা রাখার সময় কিছু জিনিস থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হয়। এর মধ্যে একটা হলো যৌন ইচ্ছা পূরণ না করা। এখন প্রশ্ন হলো, মাস্টারবেশন করলে কি রোজা হয়?
ইসলামী ফিকহশাস্ত্রের পণ্ডিতগণ এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তাদের সম্মিলিত মতানুসারে, যদি কোনো রোজাদার ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে মাস্টারবেশন করেন এবং এর ফলস্বরূপ বীর্যপাত ঘটে, তবে তার রোজা ভেঙে যাবে। মাস্টারবেশন করলে কি রোজা হয় এই প্রশ্নের উত্তর হলো, যদি ইচ্ছাকৃতভাবে বীর্যপাত হয়, তবে রোজা পূর্ণ হবে না। এক্ষেত্রে রোজাদারকে সেই দিনের রোজার কাজা অর্থাৎ পরবর্তীতে সেই রোজাটি আবার পালন করতে হবে এবং এই অন্যায় কাজের জন্য আল্লাহর কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাওয়া (তওবা) আবশ্যক।
তবে, এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন। উপরোক্ত বিধান তখনই প্রযোজ্য হবে যখন হস্তমৈথুনের মাধ্যমে বীর্যপাত সংঘটিত হয়। শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল-উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘আল-শারহুল মুমতি আলা যাদিল মুসতাকনি’ (৬/৩৮৮) তে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে, “যদি হস্তমৈথুনের মাধ্যমে বীর্যপাত না হয় তাহলে রোজা ভঙ্গ হবে না।” এর অর্থ হলো, যদি কোনো ব্যক্তি মাস্টারবেশন করেন কিন্তু বীর্যপাত না হয়, তবে তার রোজা বহাল থাকবে।
অন্যদিকে, যদি রোজাদার ব্যক্তি ভুলবশত অথবা ঘুমের মধ্যে স্বপ্নদোষের কারণে বীর্যপাতের শিকার হন, তবে তার রোজা ভাঙবে না। এর কারণ হলো, এই দুটি অবস্থায় বীর্যপাত রোজাদারের ইচ্ছাকৃত কর্মের ফল নয়। ইসলামী শরিয়ত মানুষের অনিচ্ছাকৃত ভুল বা ঘটনার জন্য তাকে দায়ী করে না।
মাস্টারবেশন করলে কি রোজা হয় এই প্রশ্নের পেছনের কারণ হলো রোজার মূল নিয়ম। রোজা মানে হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য খাওয়া-দাওয়া আর সব ধরনের আনন্দভোগ থেকে নিজেকে দূরে রাখা। ইচ্ছে করে যৌন তৃপ্তি নেওয়া বা বীর্যপাত করানো রোজার এই নিয়মের বিরুদ্ধে যায়। তাই, অধিকাংশ ইসলামিক স্কলারের অভিমত হলো, মাস্টারবেশনের মাধ্যমে যদি যৌন আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয় এবং বীর্যপাত ঘটে, তবে রোজা বাতিল হয়ে যাবে।
মাস্টারবেশন করলে কি গোসল ফরজ হয়?
মাস্টারবেশন করলে কি গোসল ফরজ হয়? এই প্রশ্নটি অনেকের মনে জাগে, বিশেষ করে যারা ধর্মীয় বিধান সম্পর্কে জানতে আগ্রহী। ইসলামী শরিয়তের আলোকে, যদি কেউ মাস্টারবেশন করে এবং এর ফলে বীর্যপাত ঘটে, তাহলে তার ওপর গোসল ফরজ হয়। অর্থাৎ, মাস্টারবেশন করলে কি গোসল ফরজ হয় এর সরাসরি উত্তর হচ্ছে, হ্যাঁ, বীর্যপাত হলে অবশ্যই গোসল ফরজ হবে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: “إنما الماء من الماء অর্থাৎ, পানি (গোসল) ওয়াজিব হয় তখনই, যখন পানি (বীর্যপাত) হয়।
তবে শুধু উত্তেজনা বা কামভাব জাগ্রত হওয়া, এমনকি আর্দ্রতা (ভেজাভাব) অনুভব হলেও, যদি বীর্যপাত না ঘটে, তবে ফরজ গোসল নয়। এই অবস্থায় মাস্টারবেশন করলে কি গোসল ফরজ হয় এর উত্তর হবে, না, বীর্যপাত না হলে গোসল ফরজ হবে না। তবে নামাজ বা কোরআন পাঠের পূর্বে ওজু থাকা আবশ্যক।
শরিয়তের দৃষ্টিতে, গোসল ফরজ অবস্থায় গোসল না করে নামাজ আদায় করা, কুরআন স্পর্শ করা, ইত্যাদি সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। তাই, মাস্টারবেশন করলে কি গোসল ফরজ হয় এই প্রশ্নের ক্ষেত্রে মূল বিষয়টি হলো, বীর্যপাত হয়েছে কি না।
উল্লেখ্য, ইসলামী বিধানে মাস্টারবেশন হারাম এবং এটি শারীরিক ও মানসিক নানা সমস্যার কারণ হতে পারে। তাই, এ কাজ থেকে বিরত থাকা এবং যদি কোনোভাবে বীর্যপাত হয়, তাহলে অবশ্যই গোসল করে নামাজ ও অন্যান্য ইবাদত আদায় করা জরুরি।
মাস্টারবেশন করলে কি বাচ্চা হয় না
মাস্টারবেশন করলে কি বাচ্চা হয় না এই প্রশ্নটি আমাদের সমাজে বহুদিন ধরেই নানা ভুল ধারণা ও কুসংস্কারের জন্ম দিয়েছে। অনেকেই মনে করেন, হস্তমৈথুন বা মাস্টারবেশন করলে ভবিষ্যতে সন্তান ধারণের ক্ষমতা কমে যায় কিংবা পুরুষত্বে সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান ও বিভিন্ন গবেষণা বলছে, মাস্টারবেশন করলে কি বাচ্চা হয় না এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল এবং ভিত্তিহীন।
বিভিন্ন স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট এবং বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত ও স্বাভাবিক মাত্রায় হস্তমৈথুন করলে শরীরের কোনও ক্ষতি হয় না, বরং এটি মানসিক চাপ কমায়, ঘুম ভালো করে এবং যৌন স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। মাস্টারবেশন করলে কি বাচ্চা হয় না এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, হস্তমৈথুনের ফলে পুরুষের শুক্রাণুর মান বা সংখ্যা স্থায়ীভাবে কমে যায় এমন কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। বরং, নিয়মিত মাস্টারবেশনের ফলে শরীর থেকে পুরনো শুক্রাণু বেরিয়ে যায় এবং নতুন, আরও স্বাস্থ্যকর শুক্রাণু তৈরি হয়, যা উর্বরতার জন্য উপকারী।
অনেকেই ভাবেন, মাস্টারবেশন করলে কি বাচ্চা হয় না কারণ এতে নাকি শুক্রাণু নষ্ট হয়ে যায়। বাস্তবে, একজন সুস্থ পুরুষের শরীরে প্রতিদিনই লক্ষ লক্ষ শুক্রাণু তৈরি হয় এবং মাস্টারবেশন করলে সাময়িকভাবে শুক্রাণুর পরিমাণ কিছুটা কমলেও, তা খুব দ্রুতই স্বাভাবিক হয়ে যায়। অতিরিক্ত হস্তমৈথুনের কারণে যদি শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে বা মানসিক চাপ বাড়ে, তবে সাময়িকভাবে যৌন ইচ্ছা বা সক্ষমতায় কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে, তবে এটি স্থায়ী নয়।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, হস্তমৈথুন করলে কি বাচ্চা নিতে সমস্যা হয়? হস্তমৈথুন করলে বাচ্চা নেওয়ার ক্ষমতায় সমস্যা হয় না, তবে অতিরিক্ত হস্তমৈথুনের ক্ষতিকারক প্রভাব থাকতে পারে। হস্তমৈথুন করলে পুরুষের উর্বরতা হ্রাস করে এমন কোনও গবেষণা নেই। অর্থাৎ, মাস্টারবেশন করলে বাচ্চা হওয়ার ক্ষমতা নষ্ট হয় না, বরং এটি স্বাভাবিক যৌন আচরণ হিসেবে ধরা হয়।
নারীদের ক্ষেত্রেও মাস্টারবেশন করলে কি বাচ্চা হয় না এই প্রশ্নটি প্রযোজ্য। গবেষণায় দেখা গেছে, নারীদের হস্তমৈথুনে উর্বরতার উপর কোনও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে না। বরং, মানসিক চাপ কমলে এবং শরীর মন ভালো থাকলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়ে।
পুরুষের স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য ইয়েস মেন
“ইয়েস মেন“ পুরুষদের স্বাস্থ্য সচেতনতায় একটি বিশ্বস্ত নাম, যেখানে অভিজ্ঞ ও দক্ষ ফিজিওথেরাপিস্টদের তত্ত্বাবধানে আধুনিক চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। আমরা পেলভিক স্টিমুলেশন, শক ওয়েভ থেরাপি, আকুপাংচার এবং PEMF থেরাপির মতো উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে পুরুষদের দ্রুত আরোগ্য লাভে সহায়তা করি। আপনার স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দিয়ে আজই আমাদের বনানী বা উত্তরা শাখায় যোগাযোগ করুন। অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে কল করুন: ০১৭৫৩৬৩১৮৪৬। মাস্টারবেশন করলে বাচ্চা হওয়ার ক্ষমতা নষ্ট হয় না এবং এতে উর্বরতাও কমে না। এটি একটি স্বাভাবিক ও নিরাপদ প্রক্রিয়া। তবে কেউ যদি অতিরিক্ত মাত্রায় হস্তমৈথুন করেন, তাহলে শরীরে ক্লান্তি, যৌনাঙ্গে সাময়িক অনুভূতি হ্রাস বা মানসিক অস্বস্তির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে, তবে এসব স্থায়ী নয় এবং বিশ্রাম ও সঠিক রুটিনে ফিরে এলে ঠিক হয়ে যায়। উর্বরতা ধরে রাখার জন্য প্রয়োজন স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, পুষ্টিকর খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম (যেমনঃ কেগেল ব্যায়াম), পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক চাপমুক্ত থাকা। তাই মাস্টারবেশন নিয়ে অযথা দুশ্চিন্তা না করে সচেতন থাকুন, নিজের প্রতি যত্ন নিন এবং সুস্থ থাকুন।
বিস্তারিত জানুন: প্রিম্যাচিওর ইজাকুলেশন, ইরেক্টাইল ডিসফাংশন, অন্ডকোষের সমস্যা এবং স্তন বৃদ্ধির মত যেসব নানাবিদ যৌন সমস্যা নিয়ে ভোগেন পুরুষেরা
বিস্তারিত জানুন: প্রতিদিন বীর্য ফেললে কি হয়
বিস্তারিত জানুন: পুরুষের ডায়াবেটিস হলে কি সন্তান হয়