আপনি কি আপনার যৌন সমস্যা নিয়ে চিন্তিত?
সেক্সূয়াল হেলথের জন্য নিয়মিত কেগেল এক্সারসাইজ করুন
বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের শরীরে নানাবিধ রোগের ঝুঁকি বাড়তে হবে । বিশেষ করে হার্ট ডিজিজ, কিডনি ডিজিজ, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক ,উচ্চরক্তচাপ , হাড় ক্ষয় সহ নানা সমস্যা। এই সব সমস্যার চিকিৎসা নিয়ে আমরা কনসার্ন থাকলেও সেক্সূয়াল সমস্যা নিয়ে আমরা এতটা কনসার্ন নই। অথচ সেক্সূয়াল হেলথ আমাদের শারীরিক এবং মানসিক হেলথের জন্য অত্যান্ত গুরুত্ববহন করে। পুরুষদের সেক্সূয়াল হেলথের মধ্যে ইরেক্টাইল ডিসফাংশন ( পুরুষাঙ্গ নিস্তেজ ) , প্রস্টেট সমস্যা, পেরোনিজ ডিজিজ ( পুরুষাঙ্গ বাঁকা ) এইসব সমস্যাগুলোই বেশি হয়ে থাকে । তবে একটা সমস্যা কমন হয়ে থাকে সেটা হল ইরেকটাইল ডিসফাংশন।
ইরেকটাইল ডিসফাংশন বা ইডি কি?
কোন পুরুষ যখন তার সঙ্গিনীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক করতে চায় , তখন যদি পুরুষাঙ্গ সোজা না হয় কিংবা বেশিক্ষণ সোজা রাখতে না পারে এটাকে ইরেকটাইল ডিসফাংশন (Erectile dysfunction) বা সংক্ষেপে ইডি বলে। বাংলা যাকে আমরা লিঙ্গ উত্থান জনিত সমস্যা বলি। বিশেষ করে চল্লিশ বছরের বেশী বয়সীদের মধ্যে এটা স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে । কানাডায় চার হাজার লোকজন নিয়ে একটা গবেষনা চালানো হয়েছিল, যাদের বয়স ছিল চল্লিশের উপর। তাদের মধ্যে অর্ধেকেরই ইরেকটাইল ডিসফাংশন সমস্যা পাওয়া গেছে। এর থেকে বুঝা যায় ইরেকটাইল সমস্যা কতটা ব্যাপক।
ইরেকটাইল ডিসফাংশন কেন হয়?
অতিরিক্ত মানসিক চাপ , রক্ত সঞ্চালনের অভাব, হরমোনাল সমস্যা এবং নার্ভ ডেমেজের কারণে অনেক বেশি হয়ে থাকে। এছাড়া বিভিন্ন ধরেনর মেডিকেল কন্ডিশন যেমন হার্ট ডিজিজ, ডায়বেটিস, স্ট্রোক, অতিরিক্ত ওজন, কম টেস্টোস্টেরন এইসব কারনেও ইরেকটাইল ডিসফাংশন হয়। তবে কারণ যাই হোক অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পেনিসে রক্তসঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হয় ,পেলভিক ফ্লোর মাসল দুর্বল হয়ে যায়।
ইডির প্রাথমিক চিকিৎসা হওয়া উচিত কেগেল এক্সারসাইজ
চিকিৎসা হিসেবে অনেকেই এটার জন্য বিভিন্ন ধরেনর ওষুধ খায়। এই ওষুধ গুলো শুধু সাময়িক ভাবেই কাজ করে। এই ওষুধ গুলোর অনেক ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। ইডির জন্য সবচেয়ে নিরাপদ এবং সহজ চিকিৎসা হল পেলভিক ফ্লোর মাসল এক্সারসাইজ। যেটাকে কেগেল এক্সারসাইজও বলা হয়।যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্ট এবং সমারসেট নাফিল্ড হাসপাতাল যৌথভাবে ইরেকটাইল ডিসফাংশনের চিকিৎসার উপরএকটা গবেষনা করেছিল। ইডির এক গ্রুপকে পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ দিয়েছিল এবং অন্যগ্রুপকে পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ দেওয়া হয় হয় নাই, তাদেরকে শুধু স্বাভাবিক চিকিৎসা এবং হেলদি লাইফ মেইনন্টেন করতে বলা হয়েছিল। দেখা গেছে তিন মাস পর যেই গ্রুপকে পেলভিকক ফ্লোর এক্সারসাইজ দিয়েছিল তাদের অনেক অনেক ভাল উন্নতি হয়েছে । যাদের দেওয়া হয় নাই , তাদের উন্নতি হয় নাই। পরবর্তীতে আবার দুই গ্রুপকেই পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ দেওয়া হয়েছিল । পরবর্তীতে দেখা গেছে দুই গ্রুপেই ভাল উন্নতি হয়েছে। পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ গুলো করিয়েছিল ফিজিওথেরাপিস্ট।
কিগল এক্সারাইজ কিভাবে করবেন?
প্রথমত – কেগেল এক্সারসাইজ করার আগে প্রস্রাব সেরে নিবেন , যাতে প্রস্রাবের থলি ফাঁকা থাকে।
দ্বিতীয় – এক্সারসাইজটি আপনি চেয়ারে বসে বা দাঁড়িয়ে বা শুয়েও করতে পারেন। এবার সোজা হয়ে বসে প্রস্রাবের রাস্তা এবং পায়খানার রাস্তা ৩ সেকেন্ড ধরে সংকুচিত ( টাইট ) করে রাখবেন। অনেক সময় আমরা পায়ুপথ দিয়ে যেইভাবে গ্যাস আসলে আমরা যেইভাবে আটকে রাখি বাসে বা মানুষের ভীড়ে। ঠিক সেইভাবে ৩-৫ সেকেন্ড ধরে রাখবেন। এইভাবে ১০ বার করলে ১ সেট হবে দিনে ৫ সেট করবেন।
ইরেকটাইল ডিসফাংশনের জন্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন অত্যাধুনিক আরেক বৈপ্লবিক চিকিৎসা হল শকওয়েভ থেরাপি । শকওয়েব থেরাপির কার্যকারিতা নিয়ে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ন গবেষনা আছে । ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টারে আমরা শকওয়েভ থেরাপি নিয়ে অনেকদিন ধরে কাজ করে আসছি । অত্যান্ত কার্যকরী এই থেরাপি। ইডির চিকিৎসায় শকওয়েভের কার্যকারিতা অনেক ভাল৷ তবে অবশ্যই এই বিষয়ে এক্সাপার্ট ফিজিওথেরাপিস্ট দ্বারা শকওয়েব থেরাপি নেওয়া উচিত ।
ইরেকটাইল ডিসফাংশন এর ঘরোয়া চিকিৎসা
অধিকাংশ ক্ষেত্রে ইরেকটাইল ডিসফাংশন অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারনে হয়ে থাকে। সেই ক্ষেত্রে অযথা টেনশন করে , ঠান্ডা মাথায় পরিবারকে সময় দিন। কেগেল এক্সারসাইজ টি সুন্দরভাবে বাসায় করেন ,পর্যাপ্ত পানি খাবেন , স্বাস্থ্যকর খাবার খাবেন , নিয়মিত ব্যায়াম করবেন , ধূমপান করবেন না, অতিরিক্ত মানসিক চাপ নিবেন না।
ইরেকটাইল ডিসফাংশন চিকিৎসায় উপকারি ৬ টি বেস্ট খাবার
- কফি (coffee) – সকাল বেলায় এক কাপ কফি ভাল মানের সেক্সের জন্য খুব উপকারি।
- কাচা মরিচ (green chilli) – টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির জন্য মরিচ অনেক ভাল কাজ করে। তাই ঝাল খাবার খেতে পারেন।
- আপেল (apple) – আপেল খেলে প্রস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক কমে।
- গাজর (carrot) – প্রতিদিন নিয়মিত গাজর খেতে পারেন।
- টমেটো (tomato) – সেক্সূয়াল হেলথের জন্য টমেতো অনেক উপকারি একটা খাবার। টমেটো প্রস্টেট ক্যান্সার ঝুঁকি প্রতিরোধ হয়। টমেটো রান্না করে খাওয়ার সময় না থাকলে , টমেটো জুস বানিয়ে খেতে পারেন।
- ডার্ক চকলেটে (Dark Chocolate) – ডার্ক চকলেটে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে।
ইডির প্রাথমিক চিকিৎসা বাসায় করতে চাইলে অবশ্যই অবশ্যই কেগেল এক্সারসাইজ করবেন এবং খাবার গুলো খাবেন।
লিখেছেন –
ডাঃ সাইফুল ইসলাম ,পিটি
বিপিটি , এমপিটি
কনসালট্যান্ট ফিজিওথেরাপিস্ট ,
ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার ,
হাউজ ৪২ , লেক ড্রাইভ রোড , সেক্টর ৭, উত্তরা , ঢাকা ।