Yes Men

সজনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন!!

সজনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন!!

আজকের এই ব্লগে আমরা আলোচনা করব সজনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। সজনে, বা মরিঙ্গা, একটি গাছ যা দীর্ঘদিন ধরে তার পুষ্টিকর গুণের জন্য পরিচিত। এই গাছের প্রায় সবকিছুই – পাতা, ফুল, ফল এবং বীজ খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে সজনে পাতা, এর অত্যধিক পুষ্টিগুণের জন্য বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

সজনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন!!

সজনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

সজনে পাতা বা মরিঙ্গা লিফ, দীর্ঘকাল ধরে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক প্রান্তে একটি জনপ্রিয় পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে পরিচিত। এর পুষ্টিগুণের জন্য একে “মিরাকল ট্রি” বা “ড্রামস্টিক ট্রি” নামেও ডাকা হয়। সজনে পাতা ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। এই পাতাটি বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্য উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে, সব কিছুর মতো সজনে পাতারও কিছু সীমাবদ্ধতা এবং সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। চলুন এ সম্পর্কে সকল কিছু জেনে নেওয়া যাক।

সজনে পাতার উপকারিতা কি কি?

সজনে পাতা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এতে অনেক ফসফরাস থাকে, যা হাড় মজবুত করে। সজনে পাতা খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে এবং রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে থাকে। এছাড়া এটি রক্তস্বল্পতা বা রক্তে লোহিত কণিকার অভাব দূর করতে সাহায্য করে। যারা নিরামিষ খান, তাদের প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে পারে সজনে পাতা।

সজনে পাতায় প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ রয়েছে। প্রতি গ্রাম সজনে পাতায় কমলার তুলনায় সাত গুণ বেশি ভিটামিন সি, দুধের তুলনায় চার গুণ বেশি ক্যালসিয়াম, এবং গাজরের চেয়ে চার গুণ বেশি ভিটামিন এ থাকে। ফলে এটি চোখ, হাড়, এবং দাঁতের জন্য খুবই ভালো। এতে কলার চেয়ে তিন গুণ বেশি পটাশিয়াম থাকে, যা শরীরের বিভিন্ন কাজ সঠিকভাবে করতে সাহায্য করে।

সজনে পাতায় নিয়াজিমিসিন নামে একটি উপাদান থাকে, যা ক্যানসারের কোষের বৃদ্ধি থামাতে পারে। এটি হজমের সমস্যা কমায় এবং পেটের অম্লতা নিয়ন্ত্রণ করে। পেপটিক আলসার প্রতিরোধেও এটি সহায়ক। সজনে পাতায় থাকা প্রদাহ-বিরোধী উপাদান আর্থ্রাইটিসের সমস্যা কমায় এবং শরীরে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

এছাড়া সজনে পাতা আমাদের মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখে। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আলঝেইমার রোগ, বিষণ্ণতা এবং স্নায়ুর ব্যাধির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। কোলেস্টেরল কমায় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে। সজনে পাতার আরও একটি বিশেষ গুণ হল, এটি হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট কমাতে সাহায্য করে।

সজনে পাতা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং কিডনিতে পাথর তৈরি হওয়া রোধ করে। এটি চোখের জন্যও খুবই ভালো, কারণ এতে বিটা ক্যারোটিন থাকে, যা চোখের রোগ প্রতিরোধ করে। যারা রক্তশূন্যতায় ভোগেন, তাদের জন্য সজনে পাতা খুবই উপকারী, কারণ এতে অনেক আয়রন থাকে।

সজনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন!!

সজনে পাতার অপকারিতা কি?

সজনে পাতার অনেক উপকারিতা আছে, যেমন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, শক্তি জোগায়, এবং শরীরকে সুস্থ রাখে। কিন্তু বেশি খেলে কিছু সমস্যাও হতে পারে। সজনে পাতা বেশি খেলে যেসব সমস্যা দেখা দিতে পারে তা হলো – 

  • বমি বমি ভাব: অতিরিক্ত খেলে পেটে অস্বস্তি হতে পারে।
  • পেটের সমস্যা: পেট ব্যথা, গ্যাস, বা হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • ক্ষুধামন্দা: সজনে পাতা বেশি খাওয়ার ফলে ক্ষুধা কমে যেতে পারে।
  • ব্লাড প্রেসার কমে যাওয়া: যারা ব্লাড প্রেসারের ওষুধ খাচ্ছেন, তারা সজনে পাতার গুঁড়া বা রস বেশি খেলে ব্লাড প্রেসার বিপজ্জনকভাবে কমে যেতে পারে।

গর্ভাবস্থায় সজনে পাতার উপকারিতা রয়েছে। তবে, গর্ভবতী নারীদের সজনে পাতা বেশি না খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়, কারণ এটি গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই, সজনে পাতা যত উপকারীই হোক, সেটি মাপে মাপে খাওয়াই ভালো।

সজনে পাতার গুড়া খাওয়ার উপকারিতা

পুষ্টিবিদরা বলছেন, সজনে পাতার গুড়ার উপকারিতা পুষ্টির এক দারুণ উৎস। এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন এ, সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, প্রোটিন, এবং জিংক। এগুলো আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে অনেক সাহায্য করে। বিশেষ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ডায়াবেটিস ও হৃদ্‌রোগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

এছাড়াও, সজনে পাতার গুঁড়া কিডনি ও যকৃত ভালো রাখতে কাজ করে। ১ টেবিল চামচ সজনে পাতার গুঁড়ায় ১৪% প্রোটিন, ৪০% ক্যালসিয়াম, এবং ২৩% আয়রন থাকে।

সজনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন!!

ত্বকের যত্নে সজনে পাতার উপকারিতা

সজনে পাতা ত্বকের জন্য অনেক ভালো। নিয়মিত ব্যবহার করলে এটি ত্বকের অনেক সমস্যা দূর করে। আসুন জেনে নেই, সজনে পাতা ত্বকের জন্য কিছু উপকারিতা – 

  • সজনে পাতা ত্বকের বলিরেখা কমাতে সাহায্য করে, যাতে ত্বক আরও সুন্দর ও তরুণ দেখায়।
  • ত্বকের কালো দাগ ও ছোপ কমায়, ত্বককে মসৃণ ও সমান করে।
  • সজনে পাতার অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণাগুণ ব্রণ বা পিম্পল হওয়া থেকে ত্বককে রক্ষা করে।
  • এতে ভিটামিন সি রয়েছে, যা ত্বকের রং উজ্জ্বল করে ও ত্বককে সজীব রাখে।
  • সজনে পাতা ত্বকে প্রয়োজনীয় প্রোটিন তৈরি করতে সাহায্য করে, যা পোরের সমস্যা কমায়।
  • শুষ্ক ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে, ত্বককে নরম ও মসৃণ রাখে।
  • এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বককে সুর্যের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।
  • সজনে পাতা ত্বকের ময়লা ও ধুলো পরিষ্কার করতে সাহায্য করে, যা ত্বককে সতেজ ও পরিষ্কার রাখে।

বিস্তারিত জানুন: রসুন ও সরিষার তেলের উপকারিতা, মালিশ এবং খাওয়ার নিয়ম কি?

বিস্তারিত জানুন: প্রথম সহবাসে ব্যথা না পাওয়ার উপায় | সহবাসে ব্যথা হয় কেন?

 

তথ্যসূত্র

Times of india —  Exploring Moringa Benefits: 6 reasons you must consume Moringa powder

Hindustan Times — Drink moringa water every day on empty stomach for these amazing benefits

Vogue — Is This Ancient “Miracle Tree” Supplement The Key To Better Health?

সাধারণ জিজ্ঞাসা

সজনে পাতায় থাকা এন্টি-অক্সিডেন্ট এবং আইসোথিয়োকাইনেটস উপাদানগুলো রক্তের সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। প্রতিদিন মাত্র ৫০ গ্রাম সজনে পাতা গ্রহণ করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সজনে পাতার চা একটি উপকারী পানীয়।

সজনে পাতার রস কিডনি বা মূত্রাশয়ে পাথর জমার সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমায় এবং এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোকে সুস্থ ও সবল রাখে। অ্যান্টি অক্সিড্যান্টে সমৃদ্ধ সজনে পাতা শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে সহায়ক।

বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, সজনে পাতা মেটাবলিক রেট বাড়াতে সহায়ক, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মেটাবলিক রেট বেশি থাকলে শরীর বেশি ক্যালোরি পোড়াতে পারে। এছাড়া, সজনে পাতায় থাকা ফাইবার পেট দীর্ঘক্ষণ ভর্তি রাখতে সাহায্য করে এবং অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ থেকে বিরত রাখে।

সজনে পাতা রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি শর্করার মাত্রা অত্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে। রক্তচাপের ক্ষেত্রে, সজনে পাতা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হলেও, যদি রক্তচাপের ওষুধের সাথে এটি গ্রহণ করা হয়, তাহলে রক্তচাপ অতিরিক্ত কমে যেতে পারে।

অ্যামাইনো অ্যাসিড ও অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টে সমৃদ্ধ সজনে পাতা শরীরকে ফ্রি র‌্যাডিক্যালের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে। এটি গ্যাস, পেটফাঁপা, অম্বল এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যার প্রতিকারেও দারুণ কার্যকর, অন্ত্রে উপকারী ব্যাক্টেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি করতেও সাহায্য করে। এছাড়া, সজনে পাতায় হাইপোগ্লাইসেমিক উপাদানও রয়েছে।

সজনে পাতায় ক্যালোরির পরিমাণ খুবই কম। প্রতি ১০০ গ্রাম সজনে পাতায় প্রায় ৩৭ ক্যালোরি থাকে। এটি ভিটামিন, মিনারেল, এবং ফাইবারের ভালো উৎস হলেও, এতে ফ্যাট এবং ক্যালোরির পরিমাণ কম, যা স্বাস্থ্যকর খাবার হিসেবে এটিকে উপযোগী করে তোলে। ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং পুষ্টি বৃদ্ধির জন্য সজনে পাতা খুবই উপকারী।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top