ঘন ঘন প্রস্রাব (frequent urination)
ঘন ঘন প্রস্রাব কি ?
ঘন ঘন প্রস্রাব (frequent urination), যাকে পোলাকিউরিয়া (pollakiuria) বলা হয়, হলো দিনের বেলায় অস্বাভাবিকভাবে বারবার প্রস্রাব করার প্রয়োজন অনুভব করা। প্রত্যেকেই বিভিন্নভাবে প্রস্রাব করে, তবে সাধারণত একজন প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিদিন ৬-৮ বার প্রস্রাব করে।
ঘন ঘন প্রস্রাব হয় কেন ?
একজন সুস্থ মানুষ দিনে ৪-৫বার প্রস্রাব করে তা হলে এটা স্বাভাবিক। যার মূত্রথলি আছে, তার ধারণক্ষমতা ২৫০ সিসি। এই পরিমাণ জমে গেলে প্রস্রাব করার অনুভূতি তৈরি হয়। এর পরে যত প্রস্রাব জমতে থাকবে, তত বেশি প্রস্রাব অনুভূতি তৈরি হবে।
কিন্তু যদি ৭ বারের বেশি প্রস্রাব করতে হচ্ছে, তা হলে এটি ঘন ঘন প্রস্রাব হিসেবে ধরা হবে। আপনি যদি ঘন ঘন প্রস্রাবের সাথে অন্যান্য লক্ষণগুলিও অনুভব করেন, যেমন জ্বর, ঠান্ডা লাগা, পিঠে ব্যথা বা প্রস্রাবে রক্ত, তাহলে দ্রুত একজন ডাক্তারের সাথে দেখা করা উচিত।
ঘন ঘন প্রস্রাব যেসব রোগের লক্ষণ
১. মূত্রনালি বা মূত্রথলির ইনফেকশন বা সংক্রমণ।
২.পুরুষদের প্রস্টেট গ্রন্থির সমস্যায়।
৩. মূত্রাশয়ের ক্যান্সার, স্ট্রোক, মূত্রাশয়ের স্নায়বিক ব্যাধি,অন্যান্য স্নায়ুবিক রোগ ইত্যাদি।
৪.মস্তিষ্কের টিউমার, বিকিরণ, সার্জারি, আঘাত, কিডনি রোগ ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস ও পিটুইটারি গ্রন্থি ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এই গ্রন্থিগুলো অ্যান্টি-ডায়ুরেটিক হরমোন (ADH) উৎপন্ন করে, যা মূত্রপিণ্ডকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বের করে দিতে সাহায্য করে। এ ডি এইচ (ADH) এর অভাব বা অকার্যকারিতার ফলে অসম্ভব বারবার মূত্রাশয় পূর্ণ হওয়া (polyuria) এবং বারবার মূত্র ত্যাগ (frequent urination) এর মতো মূত্রনিয়ন্ত্রণ সমস্যা দেখা দেয়। এ ছাড়াও প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া ও ব্যথা অনুভব হয়।
৫.থাইরয়েড হরমোন বা করটিসল হরমোনের আধিক্য।
৬.রক্তে ক্যালসিয়াম বা পটাশিয়ামের তারতম্য।
ঘনঘন প্রস্রাব বা অতিরিক্ত প্রস্রাব কোনো রোগ নয়, এটি রোগের উপসর্গ মাত্র। এর ফলে শরীরে পানির অভাব, পানির ভারসাম্যহীনতা, এবং সোডিয়ামের ভারসাম্যহীনতার সমস্যা হতে পারে। এ সমস্যায় আক্রান্ত হলে অবশ্যই ডায়াবেটিস বা অন্যান্য সমস্যা আছে কি না, এটি পরীক্ষা করে নিতে হবে।
ঘন ঘন প্রস্রাবের কারণ (frequent urination causes)
এই রোগের কিছু সাধারণ কারণ
- বেশি তরল পান: প্রচুর পরিমাণে পানি বা অন্যান্য তরল পান করা স্বাভাবিকভাবেই প্রস্রাব বৃদ্ধি করবে।
- ক্যাফিন এবং মদ্যপান: ক্যাফিন এবং মদ্যপান মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে, যার অর্থ তারা শরীর থেকে তরল বের করে তোলে এবং প্রস্রাব বৃদ্ধি করে।
- ওষুধ: কিছু ওষুধ, যেমন ডায়াবেটিসের ওষুধ এবং রক্তচাপের ওষুধ, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে হতে পারে।
- মূত্রাশয়ের সংক্রমণ (UTI): (UTI) মূত্রাশয়ে ব্যথা, জ্বর এবং এই রোগের কারণ হতে পারে।
- গর্ভাবস্থা: গর্ভাবস্থায়, বর্ধমান গর্ভাশয় মূত্রাশয়ে চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলে এই সমস্যা হতে পারে।
- অন্যান্য চিকিৎসাগত অবস্থা: কিডনি রোগ, হৃদরোগ এবং কিছু নিউরোলজিক্যাল অবস্থা এই রোগের কারণ হতে পারে।
এই রোগের কিছু কম সাধারণ কারণ
- ওভারঅ্যাক্টিভ মূত্রাশয় (OAB): ওভারঅ্যাক্টিভ মূত্রাশয় (OAB) হল একটি অবস্থা যা মূত্রাশয়ের নিয়ন্ত্রণ সমস্যার কারণে ঘন ঘন এবং জরুরী প্রস্রাবের অনুভূতি সৃষ্টি করে।
- ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস: এটি একটি বিরল অবস্থা যা অস্বাভাবিকভাবে উচ্চ মূত্র নির্গমনের কারণ হতে পারে।
- সেন্ট্রাল ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস: এটি মস্তিষ্কের একটি সমস্যার কারণে হয় যা মূত্র নিয়ন্ত্রণকারী হরমোনকে প্রভাবিত করে।
ঘন ঘন প্রস্রাবের চিকিৎসা (frequent urination treatment)
আপনি যদি এই রোগ নিয়ে উদ্বিগ্ন হন তবে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলা গুরুত্বপূর্ণ। তারা আপনার অবস্থার কারণ নির্ণয় করতে এবং আপনার যদি কোনও চিকিৎসাগত অবস্থা থাকে তবে চিকিৎসা করতে সহায়তা করতে পারে। কারণ নির্ণয় করে ঘন প্রস্রাবের চিকিৎসা নিলে দ্রুত সমাধান পাওয়া সম্ভব। এই রোগের সমাধানে আপনি নিজে নিজে কেগেল এক্সারসাইজ করতে পারেন। এই রোগ সমস্যা সমাধানে পেলভিক স্টিমুলেশন, আকুপাংচার, শক ওয়েভ থেরাপি ও ওজন থেরাপির মত আধুনিক চিকিৎসা প্রদান করা হয়।
আমাদের কাছ থেকে কেন সেবা নিবেন?
আমাদের কাছ থেকে কেন সেবা নিবেন?, এটি আপানাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। ইয়েস মেন (Yes Men) অল্প খরচে পুরুষের স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য, আমাদের ফিজিওথেরাপিস্টরা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে চিকিৎসা করে আসছেন। “ইয়েস মেন”এ উন্নত মানের পেলভিক স্টিমুলেশন, আরটিএমএস (rTMS),
আকুপাংচার, শক ওয়েভ থেরাপি ও ওজন থেরাপি দিয়ে এই রোগের চিকিৎসা করানো হয়ে থাকে।
কিছু জিজ্ঞাসা
ঘন ঘন প্রস্রাব হলে আপনার খাদ্যতালিকায় কিছু পরিবর্তন আনতে পারেন যা উপসর্গগুলি কমাতে সাহায্য করতে পারে। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা গুরুত্বপূর্ণ। ক্র্যানবেরি জুস সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে।টমেটোতে লাইকোপিন থাকে, যা একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা মূত্রাশয়ের স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। সবুজ শাকসবজি ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ যা মূত্রাশয়ের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।দইতে প্রোবায়োটিক থাকে যা মূত্রাশয়ের স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
একজন সুস্থ মানুষ প্রতি ২ থেকে ৪ ঘণ্টা পরপর প্রস্রাব করতে পারে। কিন্তু, এটি ব্যক্তিভেদে এবং বিভিন্ন কারণের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে।