যৌন আকাঙ্ক্ষা কি?
যৌন আকাঙ্ক্ষা হলো মানুষের স্বাভাবিক কামুকতা বা যৌন সঙ্গমের আগ্রহ। এটি মানুষের যৌন স্বাস্থ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই রোগ মানুষের স্বাভাবিক যে কোন যৌন উৎস, প্রাণদ্যক্ত ছবি ভিডিও, বিভিন্ন যৌন আলোচনা ইত্যাদি থেকে উদ্ভূত হতে পারে। তবে অতিরিক্ত যৌন আকাঙ্ক্ষা মানুষের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য বিপর্যয়ে পৌছার কারণ হতে পারে।
পুরুষের যৌন ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণ কি?
এক সময় দেখা যেত, ৫০-৬০ বছর বয়সেও পুরুষের যৌন ক্ষমতা অটুট থাকতো, কিন্তু এখন বয়স ৩০ এর উপরে গেলেই সবাই যৌন আকাঙ্ক্ষা এবং যৌন শক্তি হারাতে শুরু করে। দ্রুত বীর্যপাতের ফলে পুরুষদের যৌন চাহিদা কমতে থাকে। তবে, পুরুষের এই যৌন আকাঙ্ক্ষা কমে যাওয়ার পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে যেমন –
- ধূমপান এবং মদ্যপান: দিনে দিনে ধূমপান এবং মদ্যপান যেন স্বাভাবিক নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে অনেকে তো এর সঙ্গে সঙ্গে আরো মারাত্মক ক্ষতিকারক নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, যে সকল পুরুষের ইডির বা লিঙ্গের উত্থান জনিত সমস্যা রয়েছে তাদের বেশির ভাগই ধূমপান বা মদ্যপান সেবন করে থাকেন।
- দুশ্চিন্তা: পুরুষের সফল জীবন সঙ্গী নিজের স্ত্রী অনেক সময় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ান। অনেকেই স্ত্রীর নানারকম পেইন ধীরে ধীরে পুরুষের শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রম নষ্ট করে দিতে থাকে যার থেকে বাদ যায় না যৌন ক্ষমতাও।
- ওজন: ওজন বেশি (Overweight) থাকলে যৌন সঙ্গমের ইচ্ছাও কমে যেতে থাকে আবার ওজন কম থাকাও ভালো নয় ওজন স্বাভাবিকের থেকে কম থাকলে সেটাও যৌন ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
- শারীরিক ব্যায়াম না করা: এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন তাদের যৌন ক্ষমতা অন্যান্যদের তুলনায় বেশি হয়ে থাকে নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
- বদ হজম: বদহজমের কারণেও যৌন শক্তি কমতে থাকে। কেননা খাদ্য হজম না হওয়ার কারণে রক্ত তৈরি হতে পারে না।
- দুর্বল যকৃত: যকৃত দুর্বল হওয়ার কারণে যৌনশক্তি কমে যায় যকৃতের কাজই হলো রক্ত তৈরি করা। যকৃত দুর্বলের লক্ষণ হল মুখের স্বাদ নষ্ট হয়ে যাওয়া। শরীরের রং হলদে হলদে হয়ে যাওয়া, সহবাসের সময় উত্তেজনা কমে যাওয়া এসব যখন দেখা দিবে তখন বুঝতে হবে যে, তার যকৃত দুর্বল হয়ে গেছে ।
- মস্তিষ্কের দুর্বলতা: অনেকের মস্তিষ্কে দুর্বলতার কারণে যৌন শক্তি কমে যায়। যখন যৌনাঙ্গের শিরা দুর্বল হয়ে যায়, সব সময় রোগীর মাথায় ব্যথা অনুভব করে কিংবা সহবাসের পর পরই অস্থিরতা অনুভব করে এবং চোখে অন্ধকার দেখে। সহবাসের পরই অধিক ক্লান্তি নেমে আসে তাহলে বুঝতে হবে যে তার মস্তিষ্কের দুর্বলতা রয়েছে যার কারণে তার যৌন শক্তি হ্রাস পেয়েছে।
- পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব: ঘুমের অভাবে সেক্সের প্রতি আগ্রহ কমে যায়। ঠিক মত ঘুম না হলে এরপর যৌনতায় ক্লান্তি আসে। যৌনতা বিরক্তি করা হয়ে ওঠে।
পুরুষের যৌন আকাঙ্ক্ষা বাড়ানোর উপায়
পুরুষের যৌন ক্ষমতা বা সেক্সুয়াল পাওয়ার নির্ভর করে তার টেস্টোস্টেরন হরমোনের উপর। এই টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা যদি ঠিক থাকে তাহলে তার সেক্সুয়াল পাওয়ারও ঠিক থাকবে। যদি কোনো কারণে তার শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা কমে যায় তাহলে তার সেক্সুয়াল পাওয়ারও কমে যাবে। তাই যৌন ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য টেস্টোস্টেরন হরমোন এর মাত্রা সঠিক থাকতে হবে।
যৌন আকাঙ্ক্ষা বাড়ানোর উপায় :
- স্বাস্থ্যকর জীবন ব্যবস্থা অর্থাৎ নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করলে এই ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। কারও ধূমপান বা মদ্যপান করার অভ্যাস থাকলে সেটা বাদ দিতে হবে।
- শরীরের ওজন সব সময় নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। নিয়মিত শরীর চর্চা করতে হবে।
- রাতে পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে এবং মানসিক চাপ, অবসাদ, দুশ্চিন্তা এগুলো থেকে দূরে থাকতে হবে। যদি এ ধরনের কোন সমস্যা থাকে তাহলে অবহেলা না করে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
- ডায়াবেটিস হৃদরোগ বা অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক সমস্যা থাকলে সেটাকে অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
- সুষম খাবার গ্রহণ করতে হবে এবং কিছু কিছু খাবার যেগুলো খেলে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা শরীরে বৃদ্ধি পায় সেই সব খাবার খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে যেমন বিভিন্ন ফল কলা, আনার, খেজুর। এছাড়া ডিম খাওয়া যেতে পারে এবং মধু যদি খাওয়া যায় তাহলে মধু শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি করে।
পুরুষের যৌন আকাঙ্ক্ষা বাড়ানোর ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপির ভূমিকা
-
- শকওয়েভ থেরাপি: পুরুষের যৌন সমস্যা সমাধানের সবচেয়ে কার্যকরী চিকিৎসা হচ্ছে শকওয়েব থেরাপি। সাধারণত ৬ টা থেকে ১২ টা মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান হয়। যাদের সমস্যা প্রথম অবস্থায় থাকে তাদের প্রতি সপ্তাহে ১ টা করে সেশন নিতে হয় এবং ৬ থেকে ৮ টা সেশন এর মাধ্যমে ভালো হয়ে থাকে। যাদের ক্রনিক স্টেজে চলে যায় তাদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১২ টা পর্যন্ত সেশন লাগতে পারে। এই শকওয়েব থেরাপিটি একদম কার্যকরী এবং নিরাপদ চিকিৎসা ব্যবস্থা। এটা এভিডেন্স বেইজড চিকিৎসা।
- কিগাল এক্সারসাইজ: কিগাল এক্সারসাইজ হলো নির্দিষ্ট কিছু কিগেল ব্যায়াম যার মাধ্যমে পেলভিক ফ্লোর মাসেলের শক্তি বাড়ে। প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারার সমস্যা সমাধান হয়। পেলভিক স্টিমুলেটর বা মাসেল স্টিমুলেটর মেশিনের মাধ্যমে কিগেল এক্সারসাইজ করানো সম্ভব।
- আর টি এম এস: রিপিটেটিভ ট্রান্সক্যানিয়াল ম্যাগনেটিভ স্টিমুলেটর যাকে সংক্ষেপে বলা হয় আর টি এম এস। এই থেরাপির মাধ্যমেও যৌন সমস্যার সমাধান হয়ে থাকে।
- আকুপাংচার : আকুপাংচার হচ্ছে একটি এভিডেন্স বেইজড থেরাপি যার মাধ্যমে যৌন সমস্যার সমাধান হয়ে থাকে।
উল্লেখিত থেরাপি গুলোর মাধ্যমে একদম কার্যকর এবং নিরাপদ উপায়ে যৌন সমস্যার সমাধান হয়ে থাকে।